পাথরঘাটার রানার বিকৃত যৌন লালসায় ২৩ বছরে ৪৮ নারীকে ধর্ষণ
মাত্র ১৫ বছর বয়সে এক কিশোরীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করে জসিম উদ্দিন রানা (২৩)। এভাবে গত চার বছরে প্রতারণার মাধ্যমে তার পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে অর্ধশত নারী। সে ভুয়া কাবিন করে বিয়েও করে দুজনকে।
অবশেষে দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে গত বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) রাতে গ্রেপ্তার হয় রানা। সে বরগুনার পাথরঘাটা থানার পদ্মা করমজাতলা এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে।
মঙ্গলবার (১০ মার্চ) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালতে সিরিয়াল ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় রানা।
নিহত স্ত্রী সুরভী আক্তার (১৯) মাদারীপুরের সদর থানাধীন চরমুগুরিয়া এলাকার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে।
রানা জানিয়েছেন,‘সুরভি নকল বিয়ে ও তার বহু নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি টের পেয়ে আসল কাবিন করতে চাপ দেন। অন্যথায় তার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলার হুমকি দেন। এতে ঘাবড়ে গিয়ে রানা সুরভীকে বৃহস্পতিবার রাতে কোকাকোলার সঙ্গে নেশাজাতীয় ট্যাবলেট খাইয়ে অচেতন করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেন। পরে লাশ ঘরে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে বরগুনায় পালিয়ে যান। এসময় সুরভীর বাবা দেলোয়ার হোসেনকে মোবাইলে তার মেয়ের মৃত্যুখবর জানান।’
স্বীকারোক্তিতে রানা আরও জানান, ‘১৫ বছর বয়স থেকেই তার বিকৃত যৌন লালসা শুরু হয়। তিনি স্কুলজীবন থেকেই বিভিন্ন নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করতেন। এ কারণে এলাকাছাড়া হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতেন। তবে যেখানেই যেতেন সেই এলাকার বিবাহিত-বিধবা অথবা কিশোরীদের মায়াজালে ফেলে ধর্ষণ করতেন।’
‘২০১৬ সালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নোনদা এলাকার নান্নু মিয়ার মেয়ে নাজনীন বেগম প্রেমের টানে তার কাছে চলে এলে তিনি তাকে ঘরে তুলতে বাধ্য হন। পরে নকল কাজী দিয়ে বিয়ের নাটক করে নাজনীনের সঙ্গে সংসার শুরু করেন। তাদের দু’বছরের একটি মেয়ে আছে।
গত বছর তাকে ফেলে পালিয়ে সাভার চলে আসেন রানা। সেখানে মোবাইলে প্রেমের সম্পর্কের জেরে মাদারীপুর সদর থানাধীন চরমুগুরিয়া এলাকার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে সুরভী আক্তার তার কাছে ছুটে এলে আবারও নকল কাজী দিয়ে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন রানা। কিন্তু বিয়ের ব্যাপারটি রানার কয়েকজন প্রেমিকা টের পেয়ে যাওয়ায় তিনি ২ মাস আগে রূপগঞ্জে চলে আসেন। এখানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে কাঞ্চন বাজারে মনির মাস্টারের বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস শুরু করেন।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রূপগঞ্জের ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার কাঞ্চন দক্ষিণ বাজার এলাকার মনির মাস্টারের বাড়ির ভাড়াটিয়া জসিম উদ্দিন রানা তার স্ত্রী সুরভী আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যা করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় সুরভীর বাবা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে নেমে সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় বরগুনার পাথরঘাটা থানাধীন পদ্মা করমজাতলা এলাকায় রানার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আরও জানান, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রানা জানিয়েছেন গত চার বছরে তিনি ৪৮ জন নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন। তাদের মধ্যে কাউকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে, কাউকে আবার টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছেন।
তিনি বলেন, আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে খুনের বর্ণনা দিয়ে তার অপরাধ স্বীকার করেছেন রানা। তার দুই স্ত্রীর কারো কাছেই কাবিননামা নেই। মূলত দ্বিতীয় স্ত্রী তার একাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের কথা জেনে যাওয়ায় এবং বিয়ের কাবিন করার জন্য চাপ দেয়ার কারণেই তাকে হত্যা করেছেন বলে রানা জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন।