পাথরঘাটায় প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে এসিডে ঝলসে দেওয়ার হুমকি কিশোর গ্যাংয়ের
প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে এসিড নিক্ষেপের হুমকি দিয়েছে বরগুনা পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নের শেল্টার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীকে। এর প্রতিবাদ করায় বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর হাত কেটে নেওয়ারও হুমকি দেয় স্থানীয় দেলোয়ার হোসেনের ছেলে কিশোর গ্যাং সৈকতের অনুসারী বেলাল, সাকিব, আসাদ, আমিনুল, রাজু, রুবেল , তুহিন ওরফে রনি, ইব্রাহিম সহ আরো অনেকে। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম খলিল ও পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির।
ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রী জানান দীর্ঘদিন ধরে বেলাল ও রুবেল তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। বার বার তা প্রত্যাখ্যান করায় গত শনিবার এসিড নিক্ষেপ করে চেহারা নষ্ট করে দেয়ার হুমকি দেয় দুই বন্ধু। এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে ও তারা ঐ স্কুল ছাত্রীকে নোংরা নোংরা কথা বলে। এসময় কাইফি ও ইমন নামে দুই শিক্ষার্থী এর প্রতিবাদ করলে তাদের মারধর করে। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে হাত কেটে নেবে বলেও হুমকি দেয় তারা।
বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও তারাও কোন পদক্ষেপ নিতে পারছেনা। এ নিয়ে কয়েক দফা হামলার শিকার হয়েছে স্কুলের শিক্ষার্থী জাহিদ ,জুবায়ের, শাওন, অমিত, ওয়ালিদ, ইমন, তারিক। এমনকি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এন আই খান এর ভাইয়ের ছেলে ১০ শ্রেণীর ছাত্র ইমন ও বাদ পরেনি তাদের হামলা থেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় পাথরঘাটা পৌর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের সভাপতি সৈকত ও তার অনুসারী এই কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গাংয়ের প্রধান সৈকতের বিরুদ্ধে থানায় মাদক, মারামারি সহ একাধিক মামলা রয়েছে। সম্প্রতি সৈকত একটি মামলার কারাগার জামিনে এসে পাওনা টাকা চাইতে আসা মিনারা বেগম (৩৫) নামে এক মহিলাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে।
মিনারা বেগম জানান, স্থানীয় জব্বারের কাছে ছয় মাস আগের ১৫ হাজার টাকা চাইতে গেলে জব্বার ভাড়া করা সৈকতের দলবল সহ চাকুছোড়া নিয়ে আমাকে মারতে আসে। তখন আমি ডাক চিৎকার দিলে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে যায়।
মিনারা বেগমের ভাই ইলিয়াস প্যাদা বলেন, আমার বোনের উপর হামলার বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাদের কাছে অভিযোগ করলে তারা বলেন ঐ পোলা (সৈকত) বাইড়া গেছে আল্লাহ কাছে বিচার দাও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক লোকজন জানান, এলাকায় মাদক ও মারামারির নিয়ন্ত্রণক হচ্ছে এই বখাটে সৈকত বাহিনী। অপরদিকে এই বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের হুমকি দেয় সৈকত।
এবিষয়ে পাথরঘাটা থানার ওসি তদন্ত মোহাম্মদ সাঈদ আহমদ জানান, বিষয়টি মৌখিকভাবে অবগত হয়েছি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সর্বশেষ গতকাল রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে বিদ্যালয় সংলগ্ন মুন্সিরহাট বাজারে বখাটেরা লাঞ্ছিত করে শিক্ষার্থী কাইফির বাবা রফিকুল ইসলাম কাঁকন মোল্লাকে। কাঁকন মোল্লা জানান, ছেলেকে মারধরের ঘটনার কারণ জানতে চাইলে সৈকত বাহিনী আমাকে লাঞ্ছিত করে।অভিভাবক কে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি তাৎখনিক ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা ও এলাকাবাসির মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল জানান, আমরা এই কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারে অতিষ্ট। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকায় কোন পদক্ষেপ নিতে পারিনা আমরা। বারবার বিষয়টি নিয়ে সমাধানের জন্য বৈঠক হলেও কিছু দিন পর আবারো বেপরোয়া হয়ে ওঠে তারা।
এনিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তফা গোলাম কবির জানান, কিছু ভুঁইফোড় নেতা মুন্সিরহাট এলাকাকে জিম্মি করে রেখেছে। তারা মাদকাসক্ত। এদের কে নিয়ে আমিও শংকিত।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাবির হোসেন বলেন, পাথরঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের কাউকেই আমি চিনি না পৌর কমিটিতো দুরের কথা। আর যারা আওয়ামীলীগের অঙ্গ সংগঠনের নামে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করবে দায় আওয়ামীলীগ নেবে না।