রিফাত হত্যা মামলায় আদালতে ৪ ডাক্তার: অসংখ্য কোপ ও রক্তক্ষরণেই মৃত্যু হয় তার
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় চার ডাক্তারসহ ৫ জনের সাক্ষ্য ও জেরা সমাপ্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বরগুনার শিশু ও জেলা জজ আদালতের বিচারক হাফিজুর রহমানের আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন চার ডাক্তার ও এক পুলিশ কনস্টেবল।
ডাক্তাররা হচ্ছেন বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জামিল হোসেন, একই প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল অফিসার এসএম মাইদুল ইসলাম ও সোহেলী মঞ্জুর তন্নী, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার হাসাইন ইমাম এবং বরগুনা থানার কনস্টেবল মোসলেহ উদ্দিন।
সাক্ষ্য ও জেরার সময় হাজতে থাকা সাতজন ও জামিনে থাকা সাত শিশু আসামির সবাই উপস্থিত ছিল।
ডাক্তাররা এ সময় বলেন, রিফাত শরীফের শরীরে অসংখ্য কোপের গভীর চিহ্ন ছিল এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়।
পরে অধ্যাপক জামিল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমি ২৭ জুন বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে কর্মরত ছিলাম। আমার সঙ্গে সহকর্মী ডাক্তার মাইদুল ইসলাম ও সোহেলী মঞ্জুর তন্নীও ছিলেন। আমরা তিনজন একমত হয়ে রিফাত শরীফের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করি।
তিনি বলেন, রিফাতের শরীরে অসংখ্য কোপের চিহ্ন পাই। কলারবনের নিচে, ঘাড়ে, মাথায়, বুকের কোপগুলো মারাত্মক ছিল। কোপের আঘাতের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই রিফাত শরীফ ২৬ জুন মারা যায়। কোপের গভীরতা ছিল বেশি।
একই সাক্ষ্য দেন তার সহকর্মী মাইদুল ইসলাম ও সোহেলী মঞ্জুর তন্নী।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. হাসাইন ইমাম যুগান্তরকে বলেন, আমি ২৬ জুন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগে কর্মরত ছিলাম। বেলা আনুমানিক সাড়ে ১০টায় রিফাত শরীফ নামের এক যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে আসে। তার শরীরে অনেক কোপের আঘাত ছিল। আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। যার কারণে কাটা জখমের উপর ব্যান্ডেজ করে দ্রুত বরিশাল প্রেরণ করি।
সব আসামির পক্ষে জেরা করেন আইনজীবী সোহরাফ হোসেন।
সোহরাফ হোসেন বলেন, কোন আঘাতের কারণে রিফাত শরীফ মারা গেছে এই মর্মে ময়নাতদন্তে কোনো মতামত নেই।
সাক্ষী কনস্টেবল মোসলেহ উদ্দিন বলেন, আমি বরগুনা থানায় ডিউটিতে ছিলাম। তখন তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির স্যার নিহত নয়ন বন্ডের জম্মদিনের ভাইরাল হওয়া ভিডিও তার কম্পিউটার থেকে ডাউনলোড করে জব্দ করেন। আমি সেই জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর করেছি।
রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ পিপি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিশু আদালতে এ পর্যন্ত ৬৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
এ হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। রিফাত হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার এবং রিমান্ডে গিয়ে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর থেকে মামলা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
১৬ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনা পুলিশলাইনসে নিয়ে যায় পুলিশ। এর পর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় মিন্নিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।