কাঠালিয়ায় অশিক্ষিত ছেলের কাছে বিয়ে না দেয়ায় অপহরণ চেষ্টা, হত্যার হুমকি
ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় মালয়েশিয়া প্রবাসীর পাত্রের বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কলেজ ছাত্রীকে অপহরণের চেষ্টা অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপহরণে ব্যর্থ হয়ে ওই ছাত্রীর বাবাকে কয়েক ঘন্টা অবরুদ্ধরাখা হয় এবং তার ছোট মেয়েকে (দশম শ্রেণির ছাত্রী) তুলে নেয়ার এবং সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া একমাত্র পুত্রকে হত্যার হুমকী দেয়া হয়। এছাড়া ওইছাত্রীর বাড়িও নানা বাড়িতে তিন দফা হামলা-ভাংচুরকরে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটে নেয় অপহরণকারীরা। এ সময় মা-বাবা ও মামাকেও বেধরক মারধর করা হয়। ওই ছাত্রী স্থানীয় শফিউদ্দীন টেকনিক্যাল কলেলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পশ্চিম চেঁচরি গ্রামের মাদ্রাসার শিক্ষক মোঃ শামীম হোসেনের মেয়ে।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা পশ্চিম চেঁচরী কেখালী বাজার এলাকায়সকাল ১০টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ছাত্রীর মামা উত্তর তালগাছিয়া গ্রামের জাকির হোসেন খান বাদি হয়ে ওই রাতেই কাঠালিয়া থানায় অপহরনের মূল হোতা মিরাজ খান(৩০), পলাশ(২৫), সাইফুল ইসলাম (৪০), মারুফ হোসেন (২৫), তুষার (২৫), মহিউদ্দীন (৩০) ও রিয়ামনি আক্তারসহ আরো ৫/৬জনকে অজ্ঞতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পশ্চিম চেঁচরী গ্রামের বাসিন্দা শামীম হোসেন খানের মেয়ের (কলেজ ছাত্রী) সাথে একই বংশের মালয়েশিয়া প্রবাসী মোশারফ হোসেনের পুত্র মহিউদ্দনের জন্য মহিষকান্দি গ্রামের স্পেন প্রবাসী মিরাজ ও তার ভাই মালয়েশিয়া প্রবাসী পলাশ, সাইফুল, মারুফ, তুষার ও রিয়া মনিসহ এদের পরিবারের লোকজন বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। অশিক্ষিত প্রবাসী ছেলে সাথে বিয়ের এ প্রস্তাবে মেয়ে ও তাঁর মা-বাবা রাজি না হওয়ায় প্রবাসী পাত্র মিহউদ্দীন ও সহযোগী প্রবাসী দুই চাচাতো ভাই গত ১০/১৫ দিন পূর্বে মালয়েশিয়া ও স্পেন থেকে দেশে আসেন এবং মেয়ে ও তার মা-বাবাসহ পরিবারের লোকজনকে বিভিন্নভাবে হুমকী ও ভয়ভীতি দেখান। এমবস্থায় শামীম হোসেন খান নিরুপায় হয়ে নিরাপত্তার জন্য তার মেয়েকে নানা বাড়িতে রাখেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে মিরাজ ও পাত্র মহিউদ্দীনের নেতৃত্বে ১৫/২০জন রামদা, লোহার রড, হাতুরি ও লাটিসোটা নিয়ে ওই মেয়েকে জোর পূর্বক তুলে দেয়া জন্য শামীম হোসেন খানের বাসার লোহার গেটের তালা ভেঙ্গে দলবল ভিতরে ঢুকে। মেয়েকে না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে ঘরে টিভি ও আসবাবপত্র এবং বাসার পাকা বৈঠক ভাংচুর চালায়। এ সময় মেয়ের মা মাহামুদা ছবি, পিতা শামীমকে বেধরক মারধর করে ঘরে নগদ একলাখ টাকা ও দুই ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংঙ্ঘবদ্ধ এ দলটি দ্বিতীয় দফায় উপজেলা উত্তর তালগাছিয়া গ্রামের মেয়ের মামা জাকির হোসেনের ঘরে হামলা চালায় এবং পাত্রীকে অপহরেণ চেষ্টা করে। এ সময় ওই বাড়ির লোকজন এবং এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে তাদের প্রতিরোধে মুখে অপহরণ করতে ব্যর্থ হয় অপহরণ চক্রটি। এ সময় বাড়ির মালিক জাকির হোসেকেও মারধর করা হয়। পরে তৃতীয় দফায় হামলা ও ভাংচুর চালানো হয় মেয়ের বাবার বাড়িতে।এরপর অপহরণ চক্রটি মেয়ের বাবা শামীম খানকে কয়েক ঘন্টা বাসায় অবরদ্ধ করে নিজের মোবাইল ফোন দিয়ে (জোরপুর্বক) জাকিরকে নানা বাড়ি থেকে তার মেয়ে নিয়ে বাসায় আসতে বলেন, যদি ওকে নিয়ে না আসা হয় তাহলে তার ছোট মেয়ে জানাতুল ফেরদৌস মৌকে তুলে নিয়ে যাবে এবং ওই পাত্র মেহিউদ্দীনের কাছে তার বিয়ে দিবে এবং ১২ বছর বয়সী একমাত্র ছেলেকেও হত্যার হুমকী দেয় আসাসিরা। পরে মামা জাকির হোসেন থানা পুলিশ ও শৌলজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মাহমুদ হোসেন রিপন ও চেঁচরী রামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জাকির হোসেন ফরাজীর সযোগিতায় অবরুদ্ধ শামীম হোসেন খান ও তার ছোট ছেলে এবং মেয়েকে উদ্ধার করে।
মামলার বাদি জাকির হোসেন জানান, আমার ভাগনির উপযুক্ত বয়স না হওয়ায় এবং অপাত্রে মেয়েকে বিবাহ দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে আসামিরা সঙ্গবন্ধভাবে আমার ভাগ্নিকে অপহরনের চেষ্টা করে। মেয়েকে না পেয়ে তার বাবা শামীমকে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং ছোট ছেলেকে হত্যা ও ছোট মেয়েকেও তুলে নেয়ার হুমকী দেয় অপহরণকারীরা। বর্তমানে আমার বোন, ভগ্নিপতিসহ আমারা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি।
কাঠালিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ(তদন্ত) কাজী সাখাওয়াত হোসেন জানান, জোরপূর্বক ছাত্রী অপহরণ, বাসা-বাড়ি ভাংচুর ও পরিবারকে জিম্মি করার ঘটনায় ওই ছাত্রীর মামা জাকির হোসেন বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সাত জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।