বড় লোকসানের মুখে পাথরঘাটার চাষীরা চীনে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ

চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে আমদানি স্থগিত রাখায় রপ্তানির অভাবে শুধু বরগুনার পাথরঘাটাতেই ২০ কোটি টাকা ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে এ এলাকার কাঁকড়া চাষীদের। এলাকার বেশিরভাগ চাষী ঋণ নিয়ে এ ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তাই লাভের অঙ্কের চেয়ে এখন ব্যাংক আর এনজিওর সুদ নিয়েই দুশ্চিন্তায় কয়েকশত চাষী।
গত বছর এমন সময়ে যে কাঁকড়া চীন, থাইল্যান্ড, তিউনিশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে এবার সে কাঁকড়া পানি থেকে এখনো আলোর মুখ দেখেনি। চাষীরা বলছেন, রপ্তানির আশায় কাঁকড়া চাষ করে চাহিদা না থাকায় লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।
পেইচ প্রকল্পের সহকারী ভ্যালুচেইন ফ্যাসিলিটেটর গোলাম মোর্শেদ রাহাত আমাদের সময়কে বলেন, ‘পিকেএসএফ’র সহযোগিতায় স্থানীয় এনজিও সংগ্রামের মাধ্যমে পাথরঘাটা উপজেলার ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক উদ্যোক্তাদের কাঁকড়া চাষে উদ্বুদ্ধ করি। এতে তারা গত কয়েক বছরে অনেক লাভবান হয়েছে। তবে এ বছর কাঁকড়া বিক্রি করতে না পারায় তাদের প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হবে।’
স্থানীয় এক কাঁকড়া আড়ৎদার বলেন, ‘ঢাকার পাইকাররা আমাদের জানিয়েছে, চীনে কাঁকড়া যায় না, তাই তারাও কিনছে না। এ জন্য আমরাও চাষীদের থেকে মাল (কাঁকড়া) কিনছি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর স্ত্রী কাঁকড়া দুই হাজার ৯৫০ টাকা ও পুরুষ কাঁকড়া এক হাজার ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সেই কাঁকড়া বর্তমানে স্থানীয় বাজারে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাথরঘাটার সবচেয়ে বড় কাঁকড়ার আড়তদার চৈতি ট্রেডার্সের সমির চন্দ্র ব্যাপারি আমাদের সময়কে বলেন, ‘আজ থেকে তিন মাস আগে যে কাঁকড়া চাষীদের কাছে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি সেই কাঁকড়া এখন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় চাষীরা বিক্রি করছে। বর্তমানে চীনে রপ্তানি না থাকায় চাষীদের লোকসান গুণতে হচ্ছে।’
পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নের উত্তম মজুমদার এক একর জমিতে নির্মিত ঘেরে আড়াই হাজার কেজি কাঁকড়া চাষ করছেন। তিনি সেখানে প্রতি মাসে চার লাখ টাকার খাবার দিয়ে তিন মাস ধরে পরিচর্যা করে আসছেন।
উত্তম মজুমদার জানান, সুন্দরবন এলাকা থেকে ২০ লাখ টাকার কাঁকড়া সংগ্রহ করে তিন মাস পরিচর্যা করে খরচ হয়েছে ৩২ লাখ টাকা। অথচ এখন বাজার দরে বিক্রি মূল্য ১৫ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে কাঁকড়ার পেটে ডিম চলে এসেছে তাই বিক্রি না করলে সেগুলো মরে যাচ্ছে।’
একই এলাকার নারী উদ্যোক্তা পুতুল রানী ৩৩ শতাংশ জমিতে সাড়ে ৭০০ কেজি কাঁকড়ার চাষ করে লোকসানের মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে উপজেলার মনোজ ব্যাপারি, তপু, কিশোর, মহিন্দ্র, জোৎস্না রানী ও শিল্পী রানীসহ শতাধিক উদ্যোক্তা গোনট পূর্ণাঙ্গ কাঁকড়া বিক্রি করতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েছেন।
তবে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু চাষীদের একটু ধৈর্য ধরে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে এবং মরকের হাত থেকে রক্ষায় পেতে বাড়তি পরিচর্যা করতে পরামর্শ দিয়েছেন।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে করোনাভাইরাসের জন্য বাজার খারাপ হওয়ার কারণে এর প্রভাব আমাদের দেশে পড়তে শুরু করেছে। এ সংকট সামাল দিতে চীনের বিকল্প দেশের খোঁজ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। অতি শিগগিরই একটি সমাধান আসবে।
সুত্রঃ আমাদের সময়