ভাণ্ডারিয়ায় আটক রোহিঙ্গা যুবকের আশ্রয়দাতা ‘মা’ গ্রেফতার!
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় আটককৃত রোহিঙ্গা মো. জামালের আশ্রয়দাতা ও ‘মা’ পরিচয়দানকারী শাহিনুর বেগমকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপুরে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আবু শাহাদাৎ হাসনাইনের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি দল ভাণ্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের সামনের সড়ক থেকে শাহিনুরকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার গৃহবধূ শাহিনুর ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ইকড়ি গ্রামের মিজান সিকদারের স্ত্রী।
এর আগে রোববার রাতে পিরোজপুর ডিবি পুলিশ ভাণ্ডারিয়া পৌর শহর থেকে রোহিঙ্গা মো. জামালকে আটক করে। ওই রাতেই ডিবি পুলিশের এসআই মো. দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামি করে পিরোজপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। শাহিনুর বেগম ওই মামলার অন্যতম আসামি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ইকড়ি গ্রামের মিজান সিকদার ও শাহিনুর বেগম দম্পতি মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের নাগরিক জামালকে আশ্রয় দেয়। রোহিঙ্গা জামাল তাদের সন্তান পরিচয়ে ভাণ্ডারিয়া পৌরসভার ডিজিটাল সেন্টার থেকে জন্মনিবন্ধন করিয়ে জন্মসনদ সংগ্রহ করে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির প্রায় সব কাজ সম্পন্ন করে। ওই রোহিঙ্গা নাগরিককে ভাণ্ডারিয়া বাজারে ওই দম্পতির জিহাদ গ্যালারি নামের কাপড়ে দোকানে কাজ পাইয়ে দেয়।
রোহিঙ্গা জামাল মিয়ানমারের রাখাইনের ডেমিনা থানার রাম্যখালীর আমির হোসেন ও বেলুয়া বেগমের ছেলে। জামালের রিফিউজি নাম্বার-১৩২২০১৮০১২০১৪৫৮৫২। গত এক মাস আগে রোহিঙ্গা জামাল কক্সবাজার জেলার বালুখালী আশ্রয়ন ক্যাম্প থেকে পালিয়ে ভাণ্ডারিয়ায় আসে।
রোহিঙ্গা নাগরিক জামাল ভাণ্ডারিয়ায় এসে ওই দম্পতির পরিবারে আশ্রয় নেয়। সে বিদেশ যাওয়ার জন্য সে নিজের পরিচয় তথ্য গোপন করে পিতার নাম মো. মিজান সিকদার ও মাতার নাম শাহীনুর বেগম লিখে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র যার নম্বর-১৯৯৭৭৯১১৪১১০০০৫১০ সংগ্রহ করে। এতে জন্ম তারিখ ১০ জুলাই ১৯৯৭ উল্লেখ করা হয়।
জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে বয়স প্রমাণের জন্য ভাণ্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.বেলাল হোসেন তাকে সার্টিফিকেট দেন। এর পরে রাজাপুর উপজেলার কানুদাসকাঠি-নলবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে অষ্টম শ্রেণি পাসের সার্টিফিকেট দিয়ে সহায়তা করা হয়।
ওই জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটা এন্টির প্রুফ কপির তথ্য মতে, জামালকে ভাণ্ডারিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের নাগরিক বলে শনাক্ত করেন নারী কাউন্সিলর বেবী আক্তার।
রোববার দুপুরে রোহিঙ্গা জামাল ভাণ্ডারিয়ার ঠিকানা ব্যবহার করে পিরোজপুরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আবেদনপত্র জমা দেন। ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে গিয়ে আসল তথ্য বের হয়ে আসে। এ সময় তার কথা বলার ধরন শুনে পাসপোর্ট কর্মকর্তা তার ফিঙ্গার প্রিন্ট গ্রহণ বাতিল করেন।
পিরোজপুর ডিবি পুলিশের এসআই মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, রোহিঙ্গা জামাল তার অপর দুইভাই আবু তৈয়ব (১৩), আবু হায়াত (১০) এবং তিন বোন রুখাইয়া (২২), জামালিডা (১৬) এবং সোমা (৮) ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আসে। কক্সবাজার জেলার বালুখালী আশ্রয়ন ক্যাম্পে তারা ছিল।
পিরোজপুর পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মো.আবুল হোসেন জানান, রোহিঙ্গা ওই যুবকের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়ার সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তথ্য বেড়িয়ে আসে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সদুত্তর না দিয়ে সে দ্রুত সটকে পরে। পরে ওই যুবকের বিষয়ে পুলিশকে অবহিত করা হয়। রাতে ডিবি পুলিশ তাকে আটক করলে সত্যতা বের হয়ে আসে।
এ দিকে বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন, জেলা নির্বাচন অফিসার খান আবি শাহানুর খানসহ নির্বাচন অফিসের একটি দল রোহিঙ্গার বাংলাদেশি পরিচয়পত্র তৈরি প্রক্রিয়ার বিষয়ে তদন্তে ঘটনাস্থলে রয়েছেন।