বয়স ১০২, পেশা ভিক্ষাবৃত্তি,, বর্তমানের ডিজিটাল জামানায় এমন ভাবে বসবাস দেখে চোখ কপালে উঠবে যে কারো
=”accelerometer; autoplay; encrypted-media; gyroscope; picture-in-picture” allowfullscreen>
বরগুনার পাথরঘাটার বিষখালী নদী সংলগ্ন কাকচিড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ রুপদোন গ্রাম। চার পাশে ঘেরা মাটির দেয়াল, উপরে বাঁশ, মরিচা পড়া পুরাতন টিন আর তাল পাতার চাল। নেই কোন কাঠ, লোহা। বাঁশ দ্বারা রশি দিয়ে বেঁধে দেওয়া মাচা। ঘরের চার পাশে মাটির দেয়াল, তাও আবার একাধিক জায়গায় ফাটল। এখানেই বৃষ্টির সময় পলিথিন পেঁচিয়ে থাকেন শতবর্ষী হালিমা বিবি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বেড়িবাঁধের পাশেই হালিমার মাটির ঘর। হালিমন বিবির স্বামী ফেরেস্তালী মারা গেছে ৫০ বছর আগে। দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে আমজাদ হোসেন কয়েক বছর আগে মারা গেছে, আরেক ছেলে নুর মোহাম্মদ নিজের সংসার নিয়েই ব্যস্ত। মাকে জিজ্ঞেস করার সুযোগ নেই তার। সেজন্যই গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় দিন যাপন করছেন তিনি। এর মধ্যে তিন মাস ধরে বয়স্ক ভাতাও পাচ্ছে না তিনি।
তথ্য সংগ্রহের জন্য পাথরঘাটা শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে হালিমা বেগমের বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখা যায় ভয়াবহ ও অসহায়ত্ব জীবনের বসবাসের দৃশ্য। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর কোন উপায় নেই তার ঘরে। একটি মাত্র চৌকি, তাও আবার বাঁশের উপরে কাঠের মাচা দেয়া। দেখা মেলেনি লোহার কোন বস্তু। চৌকির উপরেই পাতলা কম্বল, কাঁথা আর মশারির মধ্যেই সীমাবদ্ধ শীত নিরাবন। বয়সের কথা জিজ্ঞেস করতেই বললেন ৩০ বছর! স্বামী মারা গেছে কত বছর হবে তাও বলতে পারছেন না। তিনি নিজেকে ৩০ বছরের যুবতি দাবি করলেও জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী জন্ম তারিখ ১৭ মে ১৯১৮। তাতে তার বয়স হয় ১০২ বছর।
একমাত্র ছেলে নুর মোহাম্মদ তার দেখাশুনা করে কিনা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, পোলায় (ছেলে) মোরে জিগায় না, মুই ভিক্ষা কইরা খাই।
প্রতিবেশি শাহজাহান বিশ্বাস বলেন, হালিমা বেগম ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে। সারা দিন ঘুরে দু এক কেজি চাল পায় তা দিয়েই চলে। আর আমরা মাঝে মধ্যে লবন, মরিচ হলুদ দেই।
হালিমন বিবির ছেলে নুর মোহাম্মদ বলেন, আমিও অসহায়, এখন বৃদ্ধ বয়স। কোন কাজকর্ম করতে পারিনা। দিন মজুরী করি, তা দিয়ে নিজের সংসারই চলা দায়। তবে মাকে তিনি মাঝে মাঝে দেখাশুনা করেন বলে দাবি করেন।
পাথরঘাটা উপজেলা নাগরিক অধিকার ফোরামের সভাপতি, শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, মৌলিক অধিকারের মধ্যে একজন নাগরিকের বাসস্থানও অধিকার। বাসস্থান হলো সাংবিধানিক অধিকার। সরকারি-বেসরকারিভাবে এতো সহায়তা থাকলেও হালিমন বিবি আজও মাটির ঘরে একাকিত্ব বাস করছেন এটা দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, কিভাবে দীর্ঘ বছর ধরে মাটির ঘরে বসবাস করছেন। জনপ্রতিনিধিদের চোখে কি পড়েনি? জনপ্রতিনিধিরা আন্তরিক না হলে তাদের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
এ বিষয় পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক। আমরা খোজ খবর নিচ্ছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্বক সহযোগিতা থাকবে এবং পরবর্তীতে সরকারি ঘরের অনুদান আসলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হালিমন বিবিকে দেয়া হবে