রাজনীতির নষ্টকথা (১ম পর্ব)
যখন স্কুলে পড়তাম; দেখতাম। বিভিন্ন সামাজিক সেবামূলক সংগঠনগুলো স্কুলে আসতো। শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি নিয়ে শ্লোগান করাতো, ‘গাছ লাগান; পরিবেশ বাঁচান।’ কিছুদিন পরে তাঁরা আবার হাজির হতো সচেতনতা বিষয়ক নতুন শ্লোগান নিয়ে, ‘দুটি সন্তানই যথেষ্ট; একটি হলে ভালো হয়।’ অথবা ‘খাবার আগে ও পরে সাবান দিয়ে লোমত হাত ধুয়ে নিন।’
আমরা মহাখুশিতে গ্রামে গ্রামে ঘুরে এইসব শ্লোগানে মুখরিত করতাম প্রতিটি উঠোন। সচেতনতামূলক ছোটছোট পোস্টার, লিফলেট লাগিয়ে দিতাম প্রতিটি ঘরের কপাটে। স্কুলে ফিরে এসে কর্মকর্তাদের দেয়া সিঙ্গারা, পুরি, পাওরুটি অথবা মিষ্টি খেতে খেতে জিজ্ঞেস করতাম। আচ্ছা, আপনারা কেবল শীক্ষার্থীদের নিযে যান কেন? তাঁরা বাবে বলত, শীক্ষার্থীরা নিষ্পাপ, সুন্দর। তোমাদের কথা সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে। এমনকি মেনেও চলে। তাই আমরা তোমাদের নিয়ে যাই। তখনও রাজনীতি নামক শব্দটি স্কুলের চৌকাঠ ডেঙায়নি। আমরা দলাদলি বুঝতাম না। বুঝতাম শুধু পড়ালেখা আর খেলাধুলা।
পাঠক, বাংলা শব্দভাণ্ডারের দু’টি শব্দ অপরূপ ও রাজনীতি। এই শব্দদ্বয়ের বিবর্তিত চেহারা দেখলে আতকে উঠতে হয়! অপরূপ শব্দটির বুৎপত্তিগত দিক বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়। অপ বা কুৎসিত রুপ যার। কিন্তু কালের পরিক্রমায়, এই শব্দটি এখন আমরা ব্যবহার করি আমাদের সবচেয়ে প্রিয় মানুষের ক্ষেত্রে। যেমন প্রেমিকার ভিমান ভাঙাতে প্রায়ই বলে থাকি, তুমি অপরুপা!
এখানে যে, শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে তা কোন প্রেমিক প্রেমিকাই জানে না। ঠিক, রাজনীতি শব্দটিও এক সময় ব্যবহার হত, রাজার নীতি হিসেবে। সাধারণ মানুষ রাজনীতি
বুঝতো না। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে রাজনীতি এখন আমাদের সমাজের সর্বনিম্ন স্তরে চলে গেছে। চোর,ডাকাত, দুর্ণীতিবাজ, ঘুষখোররা এখন রাজনীতি করে। রাজনীতিকে রাজারনীতি না বলে এখন বলা হয় ছ্যাঁচরানীতি। মানুষ-মানুষের উপর রাগ করে গালি হিসেবে এখন ব্যবহার করে, তুই রাজাকার,তুই লীগার,ইত্যাদি।
গত এক দশকে আমাদের দেশে রাজনীতিটা ডায়রিয়ার মত ছড়িয়ে পড়েছে। সংসদ ভবন থেকে ছড়িয়ে পড়া রাজনীতি এখন আর চায়ের দোকানে সীমাবদ্ধ নাই। চলেছে রান্নাঘরের উনুনে। এখন বউ ঝি’রা রান্না বসিয়ে দিয়ে, রসালো গাল-গল্প না করে রাজনীতির ফালতু প্যাঁচাল পারে। যার মধ্যে গালিগালাজ আর কুৎসাই বেশি।
এমনই স্কুলের ক্লাশে-ক্লাশেও ছড়িয়ে পড়েছে নষ্ট রাজনীতি। দলাদলি। ক্ষমতা ও নেতৃত্বের লোভে কঁচি মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখন রাজনীতির মোহে মগ্ন হয়ে নেতৃত্বের নামে শিখছে মারপিট। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। শ্রদ্ধা ও সম্মান বলতে কিছুই নাই। আছে শুধু নেতা ও বড় ভাই। সমাজ হয়ে উঠেছে পরোয়া।
স্কুলে যে মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রথম হওয়ার কথা ছিল। দেখা যায় নষ্ট রাজনীতির দূর্ঘটনার ছোবলে সে বন্ধ করে দিয়েছে পড়ালেখা। জাতি হারাচ্ছে মেধাবী সন্তানদের মেধার পযোগীতা। ফলে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র ধীরে ধীরে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায় যারা আছেন তাদের অবশ্যই স্কুল কলেজের ছাত্র রাজনীতি নিয়ে ভাবা উচিত, এবং পদক্ষেপ নেওয়ার এটাই মোক্ষম সময়। না হয অদূর ভবিষ্যতে জাতির অবক্ষয় অবধারিত।
হাফিজুর রাহমান।
(বহুমাত্রিক লেখক)