বাউফলে স্কুলের জোড়া বেঞ্চের দাম সাড়ে ১১ হাজার টাকা!
পটুয়াখালীর বাউফলে ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা কলেজে নিন্মমানের কাঠের বেঞ্চ উচ্চমূল্যে ক্রয় দেখিয়ে সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) বিরুদ্ধে।
সরকারি এই অধিদফতরের পক্ষে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন ফিডকো ফার্নিচার কমপ্লেক্স ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা কলেজে নিন্মমানের ৫৪ জোড়া বেঞ্চ সরবরাহ করেন। নিন্মমানের বেঞ্চ উচ্চমূল্যে কিনে সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য। এ বিষয়ে তদন্ত দাবি করেন ওই কলেজের সাধারণ শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিন দেখা যায়, ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা কলেজের নতুন নির্মিত পাঁচ তলা ভবনের তিন তলার কয়েকটি কক্ষে সারিবদ্ধভাবে সাজানো হচ্ছে কাঠ রঙের প্রলেপ দেয়া বেঞ্চগুলো। এ সময় বেঞ্চগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বেঞ্চগুলোতে কাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে নিন্মমানের ত্রুটিযুক্ত রাবার গামারি এবং মেহগনি কাঠ। শুধু মানের দিক থেকেই নিম্ন নয়, অধিকাংশ কাঠই ত্রুটিযুক্ত। বেঞ্চ তৈরিতে ব্যবহৃত কাঠের একাধিক স্থানে রয়েছে ছোট-বড় গর্ত।
বেশকিছু বেঞ্চে ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ফেটে যাওয়া কাঠ। কোথাও আবার কাঠের মধ্যে থাকা গর্তগুলোকে আড়াল করার জন্য কাঠের গুঁড়ির সঙ্গে আইকা মিশিয়ে তা ভরাট করে দেয়া হয়েছে। এমন নিম্ন মানের প্রতি জোড়া বেঞ্চের দাম ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৫৬৭ টাকা। নিন্মমানের বেঞ্চের এত উচ্চমূল্য শুনে চোখ কপালে তুলেছেন ওই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা। স্থানীয় একাধিক কাঠ ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সরবরাহ করা ওই মানের একজোড়া কাঠের বেঞ্চের সর্বোচ্চ বাজারমূল্য ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোসাম্মৎ মমতাজ বেগম বলেন, বেঞ্চগুলো নিম্নমানের এবং ত্রুটিযুক্ত হওয়ায় আমি রিসিভ করিনি। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে ফিডকো ফার্নিচার কমপ্লেক্সের ডিজিএম উত্তম কুমার বসুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফিডকো ফার্নিচার কমপ্লেক্স পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিএফআইডিসির একটি প্রতিষ্ঠান। বিএফআইডিসির সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের চুক্তির আলোকে ওই বেঞ্চগুলো তৈরি এবং সরবরাহ করা হয়েছে। নিন্মমানের ও ত্রুটিযুক্ত কাঠ দিয়ে বেঞ্চ তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিন্মমানের বিষয়টি সঠিক নয়। গামারি এবং রাবার কাঠ দিয়ে ওই বেঞ্চগুলো তৈরি করা হয়েছে। কিছু মেহগনি কাঠ থাকতে পারে। আমাদের কাঠগুলো সিজনিং এবং ট্রিটমেন্ট করা হয়। এ কারণে খরচও কিছুটা বেশি হয়।
আর বেঞ্চের মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত বেসরকারি কলেজসমূহের উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালনা বোর্ড এ বিষয়ে বলতে পারবে।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত বেসরকারি কলেজসমূহের উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা তানভির রসুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক্সপার্ট টিম এর দাম নির্ধারণ করেছে। নিন্মমানের এই বেঞ্চের এত উচ্চমূল্য দেখিয়ে সরবরাহ করা হলে এ ক্ষেত্রে দায় কার জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করছে। এখানে যদি নিন্মমানের কাঠ দিয়ে বেঞ্চগুলো তৈরি হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ওই বেঞ্চ রিসিভ না করে ফিরিয়ে দিতে পারে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।
যখন বেঞ্চগুলো সরবরাহ করা হয়েছে তখন আপনারা তদারকি করেছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আপনি প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফরের তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত বেসরকারি কলেজসমূহের উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের ল্যান্ড ফোনে (০২-৯৫৮৭৮৮৮) একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি তিনি।(তথ্য সূত্রঃ যুগান্তর)