পাথরঘাটায় সেই শিশু কোলে শিশু ও তার মাকে নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের আবেগময় স্টাটাস
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় ধর্ষিত এক স্কুলছাত্রীর ফুটফুটে শিশু জয় ও তার মাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার মনের আবেগমথিত একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেছেন পাথরঘাটা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত মল্লিক।
পাথরঘাটা নিউজের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
(সাথে সাথে পাথরঘাটা নিউজ টিম এর পক্ষ থেকে মা ও ছেলের সুস্থতা কামনা করছি।)
দূর্জয়!!! সব প্রতিকূলতা ও বাঁধা বিপত্তিকে উপেক্ষা করে সুস্থ্য ও সুন্দর ভাবে পৃথিবীতে এসেছে। তাই তো সবার অনুরোধে ওর নাম রেখেছি দূর্জয়। কিন্তু এই পৃথিবীতে আসাটা ওর জন্য এত সহজ ছিল না। পৃথিবীতে ওর আপন বলতে মা ও নানা ছাড়া আর কেউ নেই।
অপরাজিতা!!!!!!! দূর্জয়ের মায়ের ছদ্দনাম। বয়স ১৪ বছর। ৩/৪ বছর আগে মা মারা গেছে। বাবা বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করছে। বাবা মেয়ের কোন খোঁজ খবর রাখে না। ফলে বাবার সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই। বাধ্য হয়ে মামার বাড়িতে নানা নানীর কাছে বেড়ে উঠা তার। কিন্তু নানীও মারা গেছে বছর তিনেক আগে। আছে শুধু ৭০ উর্দ্ধো নানা। ৭/৮ মাস আগে অভিভাবকহীন নাবালিকা অপরাজিতার সাথে ঘটে যায় তার জীবনের সব থেকে বড় অঘটন। বছর খানেক আগে প্রতিবেশী এক ছেলে তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায়ই তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করত। কিন্তু তখনো মেয়েটি বুঝতে পারেনি যে এরকম করার ফলে ভিতরে ভিতরে সে অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়েছে। অপরাজিতা যখন ৭ মাসের অন্তঃস্বত্তা তখন বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। বিষয়টি ছেলেটিকে বলা মাত্র সে পরিবারের সহযোগিতায় অন্যত্র পালিয়ে যায়। আজও সে পলাতক। অতঃপর থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের হয়। ডাক্তারী পরীক্ষার মাধ্যমে তার বাচ্চা প্রসবের সম্ভাব্য তারিখও নির্ধারণ হয়। আজ আদালত চলাকালীন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানায় যে স্যার ভিকটিম সন্তান সম্ভবা। আর এ অবস্থায় তার দেখাশোনা করার মতন কেউ নাই। তার নানার পক্ষেও তাকে দেখাশোনা করা সম্ভব নয়। আর সেই সাথে তার নিরাপদ হেফাজতেরও দরকার। কারণ আসামীপক্ষ তার ও তার অনাগত সন্তানের ক্ষতি করতে পারে। মেয়েটি আদালতে নানার সাথে উপস্থিত। প্রসব বেদনায় কাতর। হাতে সময়ও নাই। তদন্তকারী কর্মকর্তা জানালো স্যার এরই মধ্যে নাকি মেয়েটির একবার প্রসব বেদনা উঠেছে। কি করবো বুঝতে পারছি না। তখনও এজলাসে। মেয়েটিকে চেয়ারে বসতে বললাম। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক মুনিরা ইয়াসমিনকে ডাকলাম। বললাম হাতে সময় নাই। এখনই আপনাকে মেয়েটির দায়িত্ব নিতে হবে। ওকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। উনি রাজি হয়ে গেলেন। আর সেই সাথে এটাও বলে দিলাম আপনাকে মেয়েটির আর্থিক বা অন্য কোন বিষয়ে কোন কিছুর জন্যই চিন্তা করতে হবে না। ভরপুর এজলাসে এটাও বললাম মেয়েটির যাবতীয় দায়িত্ব আমি গ্রহণ করলাম। তার পর মেয়েটিকে নিয়ে উনি চলে গেলেন। সাথে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও গেলেন। হাসপাতালকে বলে দিলাম মেয়েটির সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে। তখন বিকাল ৩ টার মত বাজে। খুব টেনশনে পড়ে গেলাম কি করব, কি হবে, সঠিক পথে এগোচ্ছি তো??? হঠাৎ সন্ধ্যা ৭টার দিকে মহিলা পরিষদের সেক্রেটারীর। ফোন। স্যার মেয়েটির প্রসব বেদনা উঠেছে। এখন সে লেবার রুমে। আমি বললাম আপনি থাকেন আমি আসছি। সাথে সাথে হাসপাতালে ছুটে গেলাম। রুমের বাইরে আমরা সবাই দাড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর নার্স এসে বললো স্যার ছেলে হয়েছে। মা ও বাচ্চা দুজনেই সুস্থ্য আছে। সবাই খুশিতে আত্মহারা। যাক কিছুটা দুঃচিন্তা মুক্ত হলাম। কারণ মেয়েটার জীবনেরও বেশ ঝুঁকি ছিল। সাথে সাথে মিষ্টি এনে সবাইকে মিষ্টি মুখ করালাম এবং কিছুক্ষণ পর দূর্জয়কে কোলে তুলে নিলাম। বাজার হতে মা ও বাচ্ছার প্রয়োজনীয় সব কিছু নিজের হাতে কিনে আনলাম। ডাক্তার ও নার্সদের বিশেষ ভাবে ওদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য বলে দিলাম। মেয়েটির সাথে কথা বললাম। ওকে আশ্বস্ত করলাম তুমি একদম চিন্তা করো না। আমরা তোমার পাশে আছি। কিন্তু মেয়েটি তখনও নির্বাক……. মা ছেলে দুজনেই ভালো আছে।