মঠবড়িয়ায় দশম শ্রেণির স্কুলছাত্রী বাল্যবিয়ে পন্ড
দশম শ্রেণির স্কুলছাত্রী ফারাজানার (১৫) বিয়ের ধুমধাম চলছিল বাড়িতে। বর জসীম উদ্দিন (২৮) আত্মীয়-স্বজন নিয়ে বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত। মেহমানদের জন্য রান্নাবান্নার আয়োজনও প্রায় শেষ। ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী রাজি না থাকলেও বর ও কনের পরিবারের সম্মতিতেই হচ্ছে বিয়ের আয়োজন।
স্থানীয়ররা বাল্যবিয়ের বিষয়টি গোপনে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেন। বিয়ের কাজি বিয়ের কাজ শুরু করেন ঠিক এমন সময় বিয়েবাড়িতে পুলিশের উপস্থিতিতে বদলে যায় সব কিছু। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কাজি সটকে পড়েন বিয়েবাড়ি থেকে। এমন অবস্থায় বিয়ের উৎসব পণ্ড হয়ে গেলে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পায় স্কুলছাত্রী ফারজানা।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় উপজেলার সবুজনগর মহল্লার কনের বাড়িতে সোমবার বিকালে এ বাল্যবিয়ে পণ্ড হওয়ার ঘটনা ঘটে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিপন বিশ্বাস গোপনে সংবাদ পেয়ে কনের বাড়িতে গিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেন। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতে বর মো. জসীম উদ্দিনকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। একই সাথে বাল্যবিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের অপরাধে বরের বাবা মোকসেদ আলীকে ১০ হাজার টাকা ও কনের বাবা আলমগীর হোসেন ঘরামীকে ১০ হাজার টাকা মোট ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন।
স্থানীয়দেও সূত্রে জানা গেছে, মঠবাড়িয়া পৌর শহরের সবুজনগর মহল্লার আলমগীর হোসেনের মেয়ে দশম শ্রেণি পড়ুয়া স্কুলছাত্রী ফারজানা আকতারের (১৫) সাথে স্থানীয় ঘটিচোরা গ্রামের মোকসেদ আলীর ছেলে চট্টগামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত জসীম উদ্দিন (২৮) এর সাথে বিয়ের আয়োজন করে দুই পরিবার। সোমবার বিকালে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার সময় গোপন সংবাদ পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিপন বিশ্বাস, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মনিকা আক্তার ও উন্নয়নকর্মী ইসরাত জাহান মমতাজ পুলিশ নিয়ে ওই বাড়িতে হাজির হন। প্রশাসনের উপিস্থিতি টের পেয়ে বিয়ের কাজি সটকে পড়েন। পওে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বর, বরের বাবা ও কনের বাবাকে মোট ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। পরে বরের বাবা ও কনের বাবা ও মার কাছ থেকে মেয়ের ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে না-দেওয়ার শর্তে মুচলেকা নেওয়া হয়। সেই সাথে বাল্যবিয়ে পড়ানোর দায়ে সংশ্লিষ্ট কাজির লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা করা হয়।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিপন বিশ্বাস বাল্যবিয়ে পণ্ড হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বাল্যবিয়ের আয়োজনের জন্য দুই পরিবারকে অর্থদণ্ডাদেশ দিয়ে সংশ্লিষ্ট কাজির লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়। একই সাথে অভিভাবকদের কাছ থেকে মুচলেকা গ্রহণ করা হয়।