পাথরঘাটা উপজেলায় গড়ে মাসে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ১৩ জন

এ এস এম জসিম
এ এস এম জসিম, বার্তা সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৪:৫৫ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ০৮:৩৭ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

পাথরঘাটা উপজেলায় মাসে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ১৩ জনমির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদঃ
অন্তরা (ছদ্ম নাম) একজন গৃহবধু, বয়স মাত্র ২৭ বছর। ১১ ও ৬ বছরের দুই সন্তানের জননী। স্বামী সাগরগামী ট্রলারের জেলে শ্রমিক। তাঁদের বিয়ের বয়স ১৩ বছর। বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পাথরঘাটা পৌর এলাকার নিকটেই তাঁদের বাড়ি। বিয়ের পর ৩/৪ বছর কিছুটা শান্তি থাকলেও একান্নবর্তী পরিবার থেকে বের হলে শুরু হয় শাশুড়ির নির্যাতন ও লাঞ্চনা। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক ভালই ছিল। কিন্তু অন্তরা অবশেষে চাউলের পোকা দমনের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে গত ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে। পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে সুস্থ করা হয়।

পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও থানা সূত্রে জানা গেছে, গত আগষ্ট পর্যন্ত প্রতি মাসে প্রায় ১৩ জন মানুষ নিজে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক বছরে এমন আত্মহত্যার চেষ্টা করে ১৫৪ জন মানুষ। উপজেলার জনসংখ্যা ১ লাখ ৬০ হাজার। আত্মহত্যা চেষ্টাকারি ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সের মানুষের সংখ্যা প্রায় শতকরা ৩৬ ভাগ। এমন রোগীকে পাথরঘাটা উপজেলা হাসপাতালে এনে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

গত আগষ্ট পর্যন্ত এক বছরে ১৩ জন মারা যায় এবং থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হয়েছে বলে পাথরঘাটা থানা সূত্রে বলা হয়েছে। এ আত্মহত্যা প্রচেষ্টায় বেশী ব্যবহার করা হয়েছে কীটনাশক ওষুধ।

চিকিৎসকরা বলেছেন, চাউলের পোকা দমনের এক প্রকার ট্যাবলেট খেলে তার জীবন রক্ষা খুব দূরহ । পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের উপসহকারি মেডিক্যাল অফিসার মৃম্ময় বিশ্বাস জানান, আত্মহননের প্রচেষ্টাকারির ৭০ ভাগ কীটনাশক ব্যবহার করে। এছাড়া ইদুর মারার ওষুধ, ঘুমের বড়ি, গলায় দড়ি ইত্যাদি প্রধান কারণ।

পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. খালিদ মাহমুদ আরিফ জানান, আত্মহননের চেষ্টা করলে স্বজনরা হাসপাতালে নিয়ে আসে। বাঁচিয়ে রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়। সব ঘটনা হাসপাতালে আসে না। পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা হলে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। জটিল হলে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।

আত্মহত্যার কারণ হিসেবে পারিবারিক দ্বন্দ্ব, কলহ, প্রেম বা বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্কে প্রতিবন্ধকতা, বাল্য বিবাহ, দারিদ্রতা, শারিরীক অসুস্থতা, মাদক, সোশাল মিডিয়ার প্রভাব বলে জানালেন বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজের সমাজ কর্ম বিভাগের প্রভাষক মো. নাসির উদ্দিন। সামাজিক বন্ধন দৃঢ় ও মানসিক শক্তিতে বলিয়ান করতে পারলে এ প্রবণতা কমে আসতে পারে।

গতকাল সোমবার বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মো. হুমায়ূন শাহিন খান বলেন, আত্মহত্যার চেষ্টায় সবাই সফল হয় না। অধিকাংশ সুস্থ করে তোলা সম্ভব। কিন্তু গ্রামে কৃষকদের মজুত চালের পোকা দমনের জন্য ব্যবহৃত এক ধরনের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যা করছে অনেকে। এ বড়ি খেলে দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাকে বাঁচান প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এগুলো সকল কীটনাশক বিক্রেতার দোকানে সহসা বিক্রি হয়ে থাকে।

পাথরঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিশির বড়াল জানান, কীটনাশক ক্রেতা কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয় অবশিষ্ট কোনো ওষুধ ঘরে না রাখার জন্য কিন্তু পরিবারের সদস্যরা গোপনে নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।

উল্লেখ্য, গত সোমবার পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় আত্মহত্যা চেষ্টার প্রসঙ্গ আলোচিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির,উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হুমায়ূন কবির, অফিসার ইনচার্জ পাথরঘাটা থানা মো.শাহাবউদ্দিন,প্যানেল মেয়র, সকল ইউপি চেয়ারম্যান, সাংবাদিকসহ কমিটির অপর সদস্যরা। সভায় আত্মহনন প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনেতা, বাল্য বিয়ে বন্ধকরণ, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করণ, অভিভাকদের সচেতেনতা সুস্থ বিনোদনের গুরুত্বারোপ করেন।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)