বরগুনায় মিন্নির পরিবারে পুলিশ আতঙ্ক, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
এখনো সাদা পোশাকধারী পুলিশ আতঙ্কে আছেন বলে জানিয়েছেন চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। তার অভিযোগ- ‘সার্বক্ষণিক ছায়ার মতো আমার ও আমার পরিবারের পেছনে ওরা লেগে আছে। পুলিশ এভাবে আমাদের মানসিক টর্চার করছে।’
নিজ বাড়িতে বসে গত বুধবার এ অভিযোগ করেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। এ সময় মামলার পুনঃতদন্তের মাধ্যমে মূল রহস্য উদ্ঘাটন করে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনা কামনা করেন তিনি।
আমাদের সময়কে মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমার নির্দোষ মেয়েটি ৪৮ দিন পর অতিকষ্টে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে। রাতে ঘুমের ঘোরে মেয়েটি ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে। মানসিক ও শারীরিকভাবে সে অসুস্থ। তাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে রাখা হয়েছে। তার দুই হাঁটুতে প্রচ- ব্যথা।’
এদিকে রিফাত হত্যা মামলার অভিযুক্ত ২৪ নম্বর আসামি আরিয়ান হোসেন শ্রাবণকে মিডিয়ার সঙ্গে কথা না বলার শর্তে জামিন দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান আরিয়ানের জামিনের আদেশ দেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী গোলাম মোস্তফা কাদের জামিনের প্রার্থনা করে বলেন, ‘আসামি একজন শিশু। তার বয়স ১৬ বছর, ১০ম শ্রেণির ছাত্র। পুলিশ ১৯ বছর দেখিয়ে তাকে চালান দিয়েছে।’ রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করেন এপিপি অ্যাডভোকেট সঞ্জিব দাস।
গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলা যাবে না এবং বাবার জিম্মায় থাকবেন- এ দুই শর্তে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। পরে গত মঙ্গলবার বরগুনা কারাগার থেকে মুক্তি পান আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় মুক্তির পর কারাফটকে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সরাসরি শহরের মইঠা এলাকায় বাবার বাসায় নেওয়া হয়।
মোজাম্মেল হোসেন কিশোর আরও বলেন, আমি আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। আমার নির্দোষ মেয়েটি দেড় মাস অতিকষ্টে জেলে ছিল। অথচ আমার মেয়ে ছিল এ মামলার সাক্ষী। মিন্নি তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেদিন সন্ত্রাসীদের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। অথচ একটি প্রভাবশালী মহলের কারণে আমার মেয়েকে আসামি করা হয়েছে। বিনা দোষে দীর্ঘদিন জেল খাটতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি এখনো সাদা পোশাকধারী পুলিশ আতঙ্কে আছি। ওরা সার্বক্ষণিক ছায়ার মতো আমার ও আমার পরিবারের পেছনে লেগে আছে। বাড়ির আশপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করে। আমি কোথায় যাই, কী করছি সব খোঁজখবর নিচ্ছে ছদ্মবেশে। আমার মেয়ে স্বামীহারা হয়েছে। আর পুলিশ আমাদের কেন মানসিক টর্চার করছে?
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা থানার ওসি (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবীর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে আমার কিছুই জানা নেই।
আরেক প্রশ্নের জবাবে কিশোর বলেন, মিন্নিকে উন্নত চিকিৎসার পর সুস্থ হলে আবার সে পড়াশোনা শুরু করবে।
আলোচিত এ হত্যা মামলার অধিকতর, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তে আবারও পিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।
তিনি জানান, গত ১৯ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও আইজিপি বরাবরে করা আবেদনে উল্লেখ করেন, রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি প্রধান সাক্ষী ছিল। হত্যাকা-ের ১৯ দিন পর মামলার প্রধান সাক্ষী আমার মেয়েকে হঠাৎ করে মামলার বাদী হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন। একটি প্রভাবশালী মহল ও পুলিশ সুপার মারুফ হোসেনসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা রিফাত শরীফের বাবা অর্থাৎ বাদীকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করিয়ে আমার মেয়েকে হত্যার সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে আমার মেয়েকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে বাধ্য করে। যা আমার মেয়ের ঐচ্ছিক জবানবন্দি নয়। আমি রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অথবা সিআইডিতে হস্তান্তরের দাবি জানাচ্ছি।
গত ২৬ জুন রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পর দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন, তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলেকে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়।