পাথরঘাটার ট্রলার ডুবির একমাসেও ১০ জেলের সন্ধান মেলেনি
বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রে ঝড়ের কবলে পড়ে ১৬ জেলেসহ নোঙর করা এফবি জাকিয়া ট্রলার ডুবে যায়। ডুবে যাওয়ার পর পৃথক ৬ জেলে উদ্ধার হলেও গত এক মাসেও সন্ধান মেলেনি বাকি ১০ জেলেসহ ট্রলারটির। দীর্ঘদিনেও সন্ধান না পাওয়ায় তাদের সলিল সমাধি হয়েছে নাকি এখনো বেচে আছেন এমন তথ্য দিতে পারছে না কেউ। ফিরে না আসা জেলেদের নিজ বাড়িতে মিলাদ মাহফিলও করেছেন স্বজনরা।
এর আগে শনিবার (৩ আগস্ট) ভোর রাত ৩টার দিকে পাথরঘাটা থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের পূর্বলালবয়া এলাকায় বৈরী আবহাওয়ায় বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় ঝড়ের কবলে পড়ে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার তাফালবাড়ী গ্রামের আনোয়ার হোসেনের মালিকানাধীন এফবি জাকারিয়া নামে মাছ ধরা একটি ট্রলার ১৬ জন জেলে নিয়ে ডুবে গিয়ে ট্রলারসহ নিখোজ হয়। পরে নিখোঁজদের মধ্যে ৭ ঘণ্টা ভেসে থাকার পর মাহমুদ নামে এক জেলেকে এফবি আরিফ ট্রলারের জেলেরা উদ্ধার করে। ওইদিন বিকেলে পাথরঘাটা বিএফডিসি মেসার্স মক্কা ফিসে ফিরে আসেন তিনি।
জানা যায়, পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের তাফালবাড়িয়া গ্রামের আনোয়ারের মালিকানা এফবি জাকিয়া ট্রলারসহ ১৬ জেলে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করতে যায়। বঙ্গোপসাগরের পুবই লাল বয়া এলাকায় জাল ফেলে ট্রলারটি নোঙর করে রাখে জেলেরা। এ সময় হঠাৎ প্রচন্ড ঢেউয়ে ট্রলারটি উল্টে পানিতে ডুবে যায়। ৭ ঘন্টা পর মাহমুদ নামে এক জেলেকে অপর একটি ট্রলারের জেলেরা উদ্ধার করে। বাকি জেলেদের মধ্যে সোমবার (৫ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গভীর সমুদ্রের মৌডুবির বয়ার সামনে একটি রিং বয়া নিয়ে ভাসতে দেখে পটুয়াখালীর আলীপুরের আব্দুল মজিদের মালিকানা এফবি মজিদ ট্রলারের জেলেরা আনোয়ার হোসেন মাঝি, ইউসুফ মিয়া, আলমগীর হোসেন, মো. হেলাল ও সেলিম মিয়াকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে পটুয়াখালীর আলীপুর এলাকায় নিয়ে যায়।
যারা নিখোজ রয়েছেন তারা হলেন, আব্দুল খালেক পহলানের ছেলে ইকবাল হোসেন, আব্দুল মালেকের ছেলে আকতার হোসেন, সেকান্দার আলীর ছেলে আকবর হোসেন, আবুল কাশেমের ছেলে মো. সোহেল, মুজাম্মেল হকের ছেলে অলিউর রহমান, আব্দুল মতিনের ছেলে মোহাম্মদ আলী, আব্দুল মালেকের ছেলে আব্দুল মন্নান, শফিকুলের ছেলে মো. বেল্লাল, মো. রফিকের ছেলে মো. সোহাগ। তাদের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার কমল নগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। একজনের বাড়ি পাথরঘাটা উপজেলার দক্ষিণ চরদুয়ানী গ্রামে শাহজাহানের ছেলে মো. মহসিন।
মৃত্যকুপ থেকে ফিরে আসার পরে জেলে মাহমুদ বলেছিলেন, ‘সাগরে ঢেউয়ে ট্রলার ডুবে যাওয়ার পর কয়েক ঘণ্টা পানিতে ভাসতে ভাসতে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করেছি, কেউ এগিয়ে আসেনি। প্রায় ৭ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর একটি ট্রলারের জেলেদের মায়ায় বাঁচার সাধ্য হয়েছে। নইলে আমিও পানিতে তলিয়ে যেতাম হয়তো মরদেহও ফিরে পেতো না কেউ।’ তিনি আরও বলেন, গভীর সমুদ্রের পুর্বলাল বয়া এলাকায় ঘুমন্ত অবস্থায় নোঙর করা ট্রলারটি ঢেউয়ের ধাক্কায় উল্টে যায়। এতে ওই ট্রলারের ব্রিজের ওপরে থাকা ৫ জেলে ভাসতে থাকে বাকি ১১ জেলে ওই ট্রলারের ব্রিজের ভেতরে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। আমার মনে হয় যারা ব্রীজের নিচে ছিল তাদের নিশ্চিত মৃত্যূ হয়েছে।
পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য আড়তদার মেসার্স মক্কা ফিসের স্বত্বাধিকারী মো. মহিউদ্দিন খান হিরু বলেন, ট্রলার মালিকের মাধ্যমে ১০ জেলের বাড়িতে তাদের জন্য দোয়া মাহফিলের মাথাপিছু ১৫ হাজারা টাকা করে মোট দেড় লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। তাদের নিজ নিজ বাড়িতে ১ মাস পুর্তিতে এ মিলাদ মাহফিল করেন স্বজনরা।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ওই ট্রলার ডুবিতে ৬ জেলে উদ্ধার হলেও এখন পর্যন্ত ট্রলারসহ ১০ জেলের সন্ধান আজও মেলেনি।