একমাত্র ছেলে হত্যার বিচারের দাবীতে বরগুনায় মায়ের সংবাদ সম্মেলন
রাজশাহীর গোদাগাড়িতে একমাত্র ছেলেকে হত্যার বিচারের দাবীতে তার মা শেফালী আকতার।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুর ১২টায় বরগুনা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করেছেন হত্যাকান্ডের শিকার মেহেদী হাসান সবুজের বিধবা মা।
সংবাদ সম্মেলনে মা শেফালী আকতার লিখিত বক্তব্য একমাত্র পুত্রসন্তান হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল পদে চাকরি করতেন। স্বামীর চাকরির সুবাদে আমরা রাজশাহী মহানগরীর রামচন্দ্রপুর বাজার রোডে জমি ক্রয় করে বসত বাড়ি তৈরি করে সেখানে বসবাস করি। বরগুনা সদর উপজেলার ছোট লবন গোলা স্থায়ী ঠিকানা। গত বছর চারেক আগে আমার স্বামী মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে সবুজ লেখাপড়ায় অমনযোগী হয়ে পরে। স্থানীয় কতিপয় ছেলেদের সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের সাথে উঠাবসা করতে থাকায় লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটে। চলতি বছরেই সবুজ কলেজে ইন্টারমিডিয়েডে ভর্তি হয় এবং পুরোদমে লেখাপড়া শুরু করে। বন্ধুদের সাথে তার চলাফেরা আনাগোনা বন্ধ করে ঘরমুখী হয়। সবুজের বন্ধুরা এই বিষয়টিকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। তারা বিভিন্ন সময়ে সবুজকে নানা ধরনের হুমকি ধামকিও দিয়েছে। এমনকি তাকে একাধিকবার মারধর করেছে বিভিন্ন সময়ে।’
কান্নাবিজরিত কন্ঠে শেফালী আকতার সাংবাদিকদের জানান, আমার একমাত্র পুত্র সন্তান মোঃ মেহেদি হাসান সবুজকে গত ১৮ জুন সন্ধ্যা অনুমান ৭ ঘটিকার সময় তার বন্ধু রাজ বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। ঐদিন অনুমান বারোটার সময় আমার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে সৈকতের মোবাইল দিয়ে কল দিয়ে সবুজ বাসায় ফিরছে কিনা জানতে চায়। পুনরায় রাত ১টা ৩০মিনিটে কল করে বলে, সবুজ যত রাতেই আসুক, আমাকে জানাবেন। রাত্রে আমার ছেলে সবুজ বাসায় না ফিরলে আমি ও আমার বৃদ্ধা মা শহরের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি। ১৯জুন রাত ৮টায় আমার বাসায় রাজ এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করে, সবুজ বাসায় এসেছে কিনা? আমি বলি, তুই দেখে নিয়ে গেছিস। সবুজ এখনো আসে নাই। রাত্রি অনুমান ৩টায় সবুজের বন্ধু সৈকত বাসায় এসে একটি মোবাইল ফোনে সবুজের একটি মৃত্যু ছবি দেখিয়ে বলে সবুজ গোদাগাড়ীতে মরে আছে। আমি আমার ছেলে সবুজের ছবি দেখে চিনতে পারি। ২০ জুন ভোরবেলা আমি আমার মেয়ে নাসরিন আক্তার, বড় জামাই মোঃ রাজিব, ছোট মেয়ে তানিয়া আক্তারসহ গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে এসে লাশ শনাক্ত করি। তাৎক্ষণিকভাবে আমার ছেলের মৃত্যু সম্পর্কে ভালোভাবে তথ্য না পাওয়ায় পোস্টমর্টেম ছাড়া লাশ নিয়ে দেশের বাড়ি বরগুনার ছোট লবনগোলা গ্রামে চলে এসে ২১জুন নিজবাড়ীতে দাফন করি। ২৫জুন রাজশাহীর বাসায় চলে যাই। মৃত্যুও কারণ খুঁজতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের নিকট জানতে পারি- ১৯জুন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আমার ছেলে মেহেদী হাসান সবুজকে ইট, চাপাতি ও জামের মোটা ডাল দিয়ে মারধর করে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করা হয়। পরবর্তীতে সবুজ জীবন বাঁচানোর জন্য দৌড়ে রাজশাহী টু চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়কে গ্যাস চালিত গাড়িতে উঠে। তখন তারেক ও বাবু টানাটানি করে ইট দিয়ে ভয় দেখিয়ে মারধর করে। গাড়ি থেকে টেনে নিচে নামায়। আমার ছেলে উঠে দৌড় দেয়। পিছনের দিক দিয়ে ধাওয়া করে আমার ছেলেকে চাপাতি দিয়া তারেক সবুজের পায়ে আঘাত করিলে সে গুরুতর জখম হয়ে রাস্তার পাশে পড়িয়া যায়। সেখানে আমার ছেলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে চাপাতি দিয়ে আঘাত করা হয়। তখন তারেক ও বাবু ‘ট্রাক অ্যাক্সিডেন্ট’, ‘ট্রাক এক্সিডেন্ট’ বলে চিৎকার দিতে থাকে। এবং টেনে হিচড়ে একটি ভ্যানে ওঠায়। কিছু দূর যাওয়ার পর তারেক ও বাবু পালিয়ে যায়। ভ্যান চালক তখন আমাদের অচেতন ছেলেকে পুনরায় কিছুদূর পিছন এসে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর অ্যাম্বুলেন্স পুলিশের সহায়তায় গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে বিকাল ৬টায় কর্তব্যরত ডাক্তার সবুজকে মৃত ঘোষণা করেন।’
হত্যাকান্ডের শিকার সবুজের মা বলেন, বাজশাহীর গোদাগাড়ি থানায় এব্যাপাড়েও হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আসামীরা হলো- ০১. রাজ, পিতা- গেদা মিয়া, সাং রমনা, থানা বোয়ালিয়া, ২। তারেক, পিতা- অজ্ঞাত, বোয়ালিয়া, ৩। সৈকত, বাসার রোড বোয়ালিয়া, ৪। আজিম, পিতা- অজ্ঞাত, বোয়ালিয়া, ৫। হৃদয়, পিতা-অজ্ঞাত, সাং- পঞ্চবটি, বোয়ালিয়া, ৬। তানবীর, পিতা অজ্ঞাত, বাসার রোড, বোয়ালিয়া, ৭। আনোয়ার হোসেন, পিতা- অজ্ঞাত, থানা- গোদাগাড়ি, ০৮। মোঃ তারেক ও ৯। মোঃ বাবু, উভয় পিতা মোঃ জালাল উদ্দিন, সাং- উজানপাড়া সাব্দিপুর, থানা গোদাগাড়ী।
সংবাদ সম্মেলনে শেফালী আকতার আরো জানান, ‘সবুজের লাশ ২২জুলাই কবর থেকে উত্তোলন করে ময়না তদন্ত করা হয়েছে। ময়না তদন্তের সময় আসামী পক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিল। আসামী পক্ষ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রিপোর্ট আমাদের বিপক্ষে করবে বলে সন্দেহ হচ্ছে। পুলিশ ও ডাক্তারদের আচার-আচরণ সন্দেহজনক।’
শেফালী আকতার অভিযোগ করে বলেন, ‘যারা আমার একমাত্র ছেলেকে হত্যা করে রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে বলে প্রচার করে বেড়াচ্ছে এবং দাপটের সাথে রাজশাহীর বুকে চষে বেড়াচ্ছে তাদেরকে পুলিশ ধরছে না।’ তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে পৌঁছে মেহেদী হাসান সবুজের হত্যাকান্ডের সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।