বরগুনায় মিন্নির পক্ষে আইনজীবী না দাঁড়ানো নাগরিক অধিকারের লঙ্ঘন
রিফাত হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির করা হলেও তার পক্ষে কোনও আইনজীবী দাঁড়াননি। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে আইনগত কিংবা সাংবিধানিক দিক বিবেচনায় মিন্নির পক্ষে আইনজীবী নিয়োগে কোনও বাধা নেই বলে দাবি তুলেছেন দেশের আইনজ্ঞরা। তাদের মতে, আদালতে মিন্নির পক্ষে কোনও আইনজীবী না দাঁড়ানো সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকারের লঙ্ঘন।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, ‘একজনের বিরুদ্ধে একটি খবর প্রকাশিত হলো, আর তাতেই সে অপরাধী হয়ে গেলো, এটা ঠিক না। মামলা শুরুর পর সাক্ষী আসবে, শুনানি হবে। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর নির্ধারণ হবে মিন্নি অপরাধ করেছেন কিনা। এর আগেই আইনজীবীরা যা করেছেন তা কাম্য নয়, তার পক্ষে অন্তত একজন আইনজীবী থাকা উচিত ছিল।’
মিন্নির পক্ষে কোনও আইনজীবী না দাঁড়ানোর ঘটনাকে দুঃখজনক এবং তার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে দাবি করেছেন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, ‘আইন এবং সংবিধানে বলা আছে, যেকোনও ব্যক্তি অপরাধী হোক বা না হোক, তিনি আইনগত প্রতিকার পাবেন। তবে তার অর্থ না থাকলে সরকার তাকে আইনজীবী দেবে।’
এদিকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর দাবি করেছেন, ‘আমি তিন জন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম, আদালতে তাদের দাঁড়ানোর কথা ছিল। আমার মনে হয় প্রতিপক্ষের ভয়ে তারা আমার মেয়ের পক্ষে দাঁড়াননি।’
মিন্নির বাবার ওই শঙ্কার বিষয়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, অনেক সময় প্রভাবশালীরা তাদের বিপক্ষে আইনজীবীদের দাঁড়াতে বাধা সৃষ্টি করে। বরগুনায় যেহেতু আমরা আগে থেকেই জানি যে, ওই ঘটনার সঙ্গে অনেক প্রভাবশালী জড়িত। তাই হয়তো এটাও ভাবতে পারি, তাদের (মিন্নির পক্ষে আইনজীবীদের) সামনেও হয়তো এমন বাধা এসেছে। সেটি হলে অবশ্যই প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। আবার চাইলে কোর্টও হস্তক্ষেপ করে হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। এ বিষয়টিকে সবারই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার। কেননা, সাংবিধানিকভাবে প্রতিটি নাগরিকের আইনগত অধিকার ও আইনজীবী নিয়োগ করার অধিকার রয়েছে।
আইনগত দিক বিবেচনায় মিন্নির পক্ষে কোনও আইনজীবীর না দাঁড়ানোর বিষয়টিকে অন্যায় বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না। আইনজীবীদের সনদ প্রদান ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অন্যতম এই সদস্য বলেন, ‘মেয়েটি (মিন্নি) অপরাধী হলেও তার পক্ষে আইনজীবীদের দাঁড়ানো উচিত ছিল। ওই আইনজীবী সমিতিরও উচিত ছিল বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে আসার। অপরাধী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে আইনজীবী দাঁড়াবে না, এটা সম্পূর্ণ নৈতিকতা বিরোধী এবং বার কাউন্সিল ও মানবাধিকারবিরোধী। আমেরিকার মতো জায়গাতেও ওয়ান ইলেভেনের ঘটনায় দোষীদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ হয়। আমাদের দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের পক্ষেও আইনজীবী নিয়োগ হয়েছে। তাহলে মিন্নিরা কেন আইনজীবী পাবেন না? আমি মনে করি এটি বরগুনার আইনজীবী সমিতির দুর্বলতা।’
তবে কোনও মামলায় আইনজীবীরা স্বেচ্ছায় যেতে না চাইলে আইন অনুযায়ী তাদের জোর করে নিয়ে যাওয়া যাবে না বলেও জানান আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।
এদিকে আইনজীবী না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান নান্টু দাবি করেন, মিন্নির পক্ষ থেকে কোনও আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘কোনও আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ না করে, রাস্তায় রাস্তায় চিৎকার করে বেড়ালে তো আইনজীবী পাওয়া যাবে না।’
এ বিষয়ে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারি আসলাম বলেন, আসামিপক্ষ চাইলে আদালতের বিচারকের কাছে আর্জি জানিয়ে আইনজীবী পেতে পারেন।(তথ্য সীত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন)