ফের ৭ দিনের রিমান্ডে রিফাত ফরাজি : আলোচনায় মিন্নি
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার দ্বিতীয় আসামি রিফাত ফরাজির আবারো সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পাঁচ দিনের রিমান্ডে আছেন অপর আসামি শ্রাবণ। এদিকে, নতুন আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আসায় ফের আলোচনায় এ ঘটনায় নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নি।
নয়ন বন্ডের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ সময় উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের জন্য দায়ের করা মামলায় সোমবার সন্ধ্যায় আদালতে হাজির করা হয় রিফাত ফরাজিকে।
এ সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী তা মঞ্জুর করেন।
এ বিষয়ে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, ‘গত দুই জুলাই নয়ন বন্ড পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা ও একটি অস্ত্র মামলা দায়ের করে। দুটি মামলায় রিফাত ফরাজিকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের দায়ের করা অস্ত্র মামলায় রিফাত ফরাজিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। পরে আদালত তা মঞ্জুর করেন।’
রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এর আগেও রিফাত ফরাজি সাত দিনের রিমান্ডে ছিল বলে জানান তিনি।
গত ১ জুলাই আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ১১ নম্বর আসামি মো: অলিউল্লাহ অলি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত তানভীর একই আদালতে স্বেচ্ছায় রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
এরপর গত ৪ জুলাই রিফাত হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি চন্দন ও ৯ নম্বর আসামি মো: হাসানও একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ৫ জুলাই একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের ফুটেজ দেখে শনাক্ত হওয়া ও তদন্তে বেরিয়ে আসা অভিযুক্ত মো: সাগর ও নাজমুল হাসান।
এদিকে এ মামলার দ্বিতীয় আসামি রিফাত ফরাজির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রামদা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এছাড়াও এ মামলার ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয়, সন্দেহভাজন অভিযুক্ত সাইমুন ও রাফিউল ইসলাম রাব্বি পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।
রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গতকাল গ্রেফতার আরিয়ান শ্রাবণের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আলোচনায় মিন্নি
বরগুনায় প্রকাশ্যে শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা, যুক্তি-তর্ক চলছেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখছে বিষয়টি। ঠিক এই মুহূর্তে হত্যাকাণ্ডটির নতুন আরেকটি ভিডিও ফুটেজ সামনে আসায় এর তদন্তে যেন আরো বেগ পেল। ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হলো মিন্নি।
সিসিটিভির নতুন ফুটেজটিতে ‘স্বাভাবিকভাবে’ হাঁটার কারণে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে পারেন রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। মামলার এক নম্বর সাক্ষী মিন্নি। যে কোনো সময় পুলিশি হেফাজতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে। মিন্নি বর্তমানে পুলিশি নিরাপত্তায় বরগুনায় তার বাবার বাসায় অবস্থান করছেন।
শনিবার বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা গেছে। ভিডিওটি ৯ মিনিট ৩ সেকেন্ডের। ভিডিও ফুটেজটির ৫ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে দেখা গেছে, নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ ১০-১২ জন রিফাতকে মারধর করতে করতে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে বের হচ্ছে। এদের মধ্যে একজন পেছন থেকে রিফাতকে ধরে রেখেছে। বাকি দুজন দুইহাত ধরেছে। ৫ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডে ফুটেজে মিন্নিকে দেখা যায়, তার বাম হাতে একটি ভ্যানিটি ব্যাগ ছিল। সে ভ্যানিটি ব্যাগ হাতে স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিল। একবার ডানেও তাকিয়েছেন কলেজের দিকে।
৫ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে যখন নয়নের সঙ্গীরা রিফাতের মাথায় হাত দিয়ে আঘাত করেন তখনো স্বাভাবিক ছিলেন মিন্নি। ৫ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডে যখন সব বন্ধুরা একসাথে রিফাতের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন তখন প্রথমবারের মতো দৌড়ে যান মিন্নি। প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। তখন দা বের করে কোপানো শুরু হয়। পেছন থেকে মিন্নিকে প্রতিরোধ করতে দেখা যায়।
এ ঘটনার পর নয়নরা যখন পালিয়ে যায় তখন একজন মিন্নিকে তার পার্সটি মাটি থেকে হাতে তুলে দেন। মিন্নি স্বাভাবিকভাবে হেঁটে হেঁটে সামনের দিকে হাঁটতে থাকেন। এ ঘটনার ৮ মিনিট পর একটি মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। ভিডিওটির পর নতুন করে আসে মিন্নির সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মো: সোহেল রানা বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
রিফাত ও মিন্নির বাসায় পুলিশি পাহারা
গত শুক্রবার থেকে রিফাত ও মিন্নির বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, মিন্নি এই মামলার প্রধান সাক্ষী। তার নিরাপত্তার জন্য তার বাড়ির বাইরে পুলিশ রাখা হয়েছে।