বেতাগীর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিজেই যখন ঠিাকাদার!
বরগুনার বেতাগীতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জিএম ওয়ালিউল ইসলাম অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়ে তার মায়ের নামের প্রতিষ্ঠানে সেতুর কাজ নেওয়ায় আজও ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছে স্থানীয়রা। কাজটি বাতিল করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করার পরেও এখনো কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা অভিযোগ করেন, পিআইও সরকারি কর্মচারি (আচরন) বিধিমালা লঙ্ঘন করে কাজ নেয়। তার অতি লোভের কারনে তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়।
এতে পিছিয়ে পরে নির্মানকাজ। অপচয় হয় সরকারি অর্থ। ব্যাহত হয় তৃনমুল পর্যায়ে কাঙ্খিত উন্নয়ন। পুনঃদরপত্রে প্রায় ৫ মাস বিলম্বিত হওয়ায় এখনো সেতুর নির্মানকাজ পুরোপুরি সম্পন্ন না হওয়ায় এলাকাবাসী পানি নিস্কাশন, ফসল উৎপাদনেও পিছিয়ে পরছে।
জানা যায়, দূর্যোগ ও ত্রান মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ‘ গ্রামীন রাস্তায় কম-বেশি ১৫ মিটার দৈর্ঘের সেতু/ কালভার্ট নির্মান’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় হোসনাবাদ ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ মিয়া’র বাড়ির সামনে কদমতলা খালের উপর সেতু নির্মাণ দাখিলকৃত দরপত্রের মধ্যে গত বছরের ৯ জুলাই লটারির মাধ্যমে পিআইও ওয়ালিউল ইসলামের মায়ের নামের প্রতিষ্ঠান ‘মোসাম্মত কোহিনুর বেগম’ প্রথম বিজয়ী হিসেবে ৩২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৩৮ টাকার একটি কাজ পান।
তিনিই দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব হওয়ায় ভুয়া নিয়ম-কানুন দেখিয়ে নানা কৌশলে বিভিন্ন ঠিকাদারের দরপত্র বাতিল করে অথচ মায়ের প্রতিষ্ঠানের কাগজ পত্রে নানা ঘাটতি সত্ত্বেও তৎকালীন দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি দ্বারা অনুমোদন নেন। পিপিআর ২০০৮ ও ২০০৯ অনুযায়ী লটারিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারি তার পছন্দের দুই ঠিকাদারদের কাগজপত্র ও ব্যাংক স্টেটমেন্টে ঘাটতি থাকলেও আমলে নেননি তিনি।
সংশ্লিস্টরা জানায়,‘ তথ্য গোপন করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুনঃগঠিত দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি তা বাতিল করে।’ এর ফলে পুনরায় ৪ ডিসেম্বর ২০১৮ খ্রিঃ তারিখে লটারিতে প্রথম বিজয়ী নিশাদ এন্টার প্রাইজ কাজটির কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করলেও স্থানীয় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন,‘ পিআইও‘র ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে কাজে বিলম্বিত হওয়ায় এখনো কাজ শেষ না হওয়ায় যাতায়াতে তাদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
এছাড়া সরকারি ক্রয় নীতিমালাকে (পিপিআর) বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে শত শত ঠিকাদার বোকা বানিয়ে দীর্ঘদিনধরে নানা অপকৌশলে গুরুতর অনিয়ম-দূর্নীতি করে আসছেন। এ নিয়ে পিআইও‘র বিরুদ্ধে বররগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ভুক্তভোগী ঠিকদাররা। ২০১৭ সালে পিআইও জি.এম ওয়ালিউল ইসলাম বরগুনা সদর উপজেলার দায়িত্বে ছিলেন। তখন তিনি বরগুনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোখলেছুুর রহমান ও সদরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্বাস হোসেনের স্বাক্ষর জাল করে বিভিন্ন গ্রামের সড়ক উন্নয়নের ভূয়া প্রকল্প বানিয়ে দুর্যোগ ও ত্রান মন্ত্রনালয়ে ২৫০ টন চালের বরাদ্দ চেয়ে একটি ডিউলেটার পাঠান বলে এমন অভিযোগ রয়েছে।
পিআইও ওয়ালিউল ইসলামের দাবি এসব অভিযোগ সঠিক নয়। মায়ের নামে কাজ নেয়ার বিষয় তিনি বলেন, ‘কাজটি বাতিল করে পুন: দরপত্র দেওয়া হয়েছে। আর কি বলার আছে ?’
এ বিষয় জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাজীব আহসান জানান,‘ অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়ে কাজ নেওয়ায় কাজটি বাতিল করা হয়েছে। আর তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিস্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করা হয়েছে।