রিফাত হত্যাকাণ্ড: রাতে মেসেঞ্জার গ্রুপে হত্যার নির্দেশনা

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ১০:১৩ এএম, ২৯ জুন ২০১৯ | আপডেট: ০১:৪৮ পিএম, ২৯ জুন ২০১৯

রাতে মেসেঞ্জার গ্রুপে হত্যার নির্দেশনাবরগুনায় রিফাত হত্যার মিশন পরিচালনা করা হয়েছে ০০৭ নামের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে। এই গ্রুপটির নামকরণ করা হয়েছিল জেমস বন্ডের ০০৭ নামের সঙ্গে মিল রেখে। গ্রুপের প্রধান নয়ন বন্ড এবং রিফাত ফরাজী ছিল সেকেন্ড ইন কমান্ড।

হত্যার আগের রাতে এই গ্রুপে হামলার নির্দেশনা দিয়ে সদস্যদের রামদা নিয়ে আসতে বলে রিফাত ফরাজী। নির্ভরযোগ্য সূত্র এবং পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে পুলিশের গাফিলতির কারণেই রিফাত হত্যার সঙ্গে জড়িতরা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে খুনিরা পুলিশের এই অঘোষিত সহযোগিতা পেয়েছে।

যেখানে পুলিশ বলছে, খুনের ঘটনাটি ঘটেছে তাদের সিসি ক্যামেরার আওতায় সেখানে দেশ কাঁপানো এত বড় একটি ঘটনার পরও পুলিশ কেন আসামিদের গ্রেফতারে তাৎক্ষণিকভাবে তৎপর হল না সেই প্রশ্ন এখন সর্বমহলের। তাছাড়া ঘটনার ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রধান দুই খুনি নয়ন বন্ড এবং রিফাত ফরাজীর গ্রেফতার না হওয়ার বিষয়টি নিয়েও চলছে তোলপাড়।

পুলিশ যদিও বলছে, আসামিদের গ্রেফতারে সব রকম চেষ্টা চলছে কিন্তু তারপরও এই হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার ১২ আসামির মধ্যে ৩ দিনে মাত্র ২ জন গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টিও ভাবাচ্ছে সবাইকে। এর বাইরে যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলা হচ্ছে সে ঘটনার সময় সে ফ সেখানে উপস্থিত ছিল। মামলার আসামির তালিকায়ও নাম নেই তার।

এদিকে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাদের গ্রামের বাড়িতে বসানো হয়েছে পুলিশ প্রহরা। এছাড়া দু’দিন ধরে বরগুনায় অবস্থান করে আসামিদের গ্রেফতার ও পুরো বিষয়টির তদারকি করছেন বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম।

জানা গেছে, ঘটনার ৭ দিন আগে থেকে শুরু হয় রিফাত শরীফের ওপর হামলার পরিকল্পনা। কয়েক দফা হওয়া এই পরিকল্পনা বৈঠকে খুনি নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী এবং রিশান ফরাজী ছাড়াও অংশ নেয় নয়ন-রিফাত বাহিনীর অন্য সদস্যরা। এসব বৈঠকে ছক সাজিয়ে পরিকল্পনা হয় রিফাতকে হত্যার। সবশেষ বৈঠক হয় ২৫ জুন মঙ্গলবার রাতে।

এছাড়া মেসেঞ্জার গ্রুপ ০০৭-এ হত্যার নির্দেশনা দেয়া হয়। ওইদিন রাতে এই গ্রুপে নির্দেশনা দেয় রিফাত ফরাজী। গ্রুপের সব সদস্যকে বুধবার সকালে আসতে বলা হয় সরকারি কলেজের সামনে।

রিফাত মেসেঞ্জারে একটি রামদার ছবি দিয়ে অন্যদের বলে- পারলে সঙ্গে করে এটা নিয়ে আসিস। মূলত এটাই ছিল রিফাত শরীফকে হত্যার সর্বশেষ পরিকল্পনা। ফেসবুক গ্রুপে নেয়া শেষ পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার সকাল থেকেই নজর রাখা হয় রিফাত শরীফের গতিবিধির ওপর।

স্ত্রী মিন্নির সঙ্গে দেখা করতে তিনি কলেজে আসছেন এই খবরও আগেভাগেই চলে আসে নয়ন বন্ড ও তার বাহিনীর কাছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর ক্যাডাররা বরগুনা সরকারি কলেজ গেট থেকে প্রথমে তর্ক এবং ঝগড়ার মাধ্যমে রিফাত শরীফকে নিয়ে আসে ঘটনাস্থলে।

সাহসী ছেলে হিসেবে পরিচিত রিফাত শরীফও সমানতালে ঝুঝতে থাকে তাদের সঙ্গে। ঘটনাস্থলে আসার পর প্রথম রিফাতের কলার ধরে ঘুষি মারে রিশান ফরাজী।

এর পরপরই রামদা নিয়ে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী। এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে তাকে। রিফাতের স্ত্রী মিন্নি এ সময় নয়ন ও রিফাত ফরাজীকে ঠেকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ৪৪ সেকেন্ডের মধ্যে পুরো মিশন শেষ করে বীরদর্পে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে খুনিরা।(তথ্য সূত্রঃ যুগান্তর)

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)