দাঁড়ানো ছেলেগুলো দর্শক নয়, তারাই প্রথমে হামলা করে: নববধূ মিন্নি
বরগুনায় রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাত শরীফ (২৫) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার সময় পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো দর্শক নয়, তারাই প্রথমে হামলা করেছে বলে জানিয়েছেন নিহত রিফাতের নববধূ আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।
বুধবার এ হত্যাকাণ্ডের সময় রিফাতের পাশেই ছিলেন তার নববধূ আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। তিনি খালি হাতেই খুনিদের নিবৃত করার চেষ্টা করেন। এ সময় হামলাকারীদের সঙ্গে তার ধস্তাধস্তি হয়েছে। কিন্তু স্বামীর মৃত্যু ঠেকাতে পারেননি। মিন্নি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু ফিরাইতে পারি নাই।’
ওই ঘটনার সময় আশেপাশে অনেকই ছিলেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। এরমধ্যে একজন ঘটনাটি ভিডিও করে ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেই পোস্টটি ভাইরাল হয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, রিফাতকে যখন সন্ত্রাসীরা কোপাচ্ছিল তখন তাদের খুব কাছেই কয়েকজন যুবক দাঁড়িয়েছিল। এ দৃশ্য দেখে সবাই প্রশ্ন তুলেছেন ওই ছেলেগুলো কেন এগিয়ে আসেনি। অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলোর শরীরী অঙ্গভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। কারণ ঘটনার সময় ছেলেগুলোকে খুব স্বাভাবিকভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এজন্য অনেকের প্রশ্ন, ছেলেগুলো জনসাধারণ হলে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পাড়ত না। হয় রিফাতকে বাঁচাতে এগিয়ে আসত, না হয় ভয়ে পালাত।
প্রকাশ্যে এমন হত্যাকাণ্ডের সময় স্ত্রী ছাড়া রিফাতকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে না আসায় হাইকোর্ট পর্যন্ত বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এদিকে বুধবারের সেই নৃশংস ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি কলেজ দিয়ে বের হইছি, ও (রিফাত) আমার সঙ্গে ছিল। তখন কিছু পোলাপান আইসা কী জানি বলা শুরু করছে, ‘গালি দিছো ক্যান, গালি দিছো ক্যান?’ এ রকম জানি কী…। পরে আরও দু-তিনটা ছেলে আইসা কোপান শুরু করছে। আমি অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু ফিরাইতে পারি নাই।’
আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি আরও বলেন, ‘দিন-দুপুরে যারা এমন করে, আমি তাদের সুষ্ঠু বিচার চাই। তাদের যেন শাস্তি হয়।’
মিন্নি আরও বলেন, ভিডিওতে যাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ছেলেগুলো দর্শক নয়, মূলত তারাই প্রথমে রিফাত ও আমার পথ আটকে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে তিন-চারজন রিফাতকে মারতে শুরু করেছিল। নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী চাপাতি দিয়ে রিফাত শরীফকে কোপাতে শুরু করলে তারা পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছিল। এর পর আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেও রিফাত শরীফকে বাঁচাতে পারিনি।
প্রসঙ্গত, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশাকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান রিফাত। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরও দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে তারা। রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই হামলাকারীদের থামানো যায়নি। তারা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।
নিহতের পরিবার জানায়, রিফাতকে কুপিয়ে হত্যায় অংশ নেয় নয়ন বন্ডসহ ৪-৫ জন। রিফাতের সঙ্গে দুই মাস আগে পুলিশ লাইন সড়কের আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বিয়ে হয়। বিয়ের পর নয়ন মিন্নিকে তার প্রেমিকা দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিতে থাকে।
রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, নয়ন প্রতিনিয়ত আমার পুত্রবধূকে উত্ত্যক্ত করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিত। এর প্রতিবাদ করায় আমার ছেলেকে নয়ন তার দলবল নিয়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, আমার একমাত্র ছেলেকে যারা দিনে-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।(সূত্রঃ যুগান্তর)