রিফাতের ঘতক, কে এই নয়ন বন্ড?
প্রকাশ্যে স্বামীকে খুন হতে দেখলেন স্ত্রী। শত চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারলেন না খুনির ধারাল অস্ত্রের কোপ থেকে।
গতকাল বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ভিডিও দেখে হতবাক দেশবাসী।
ইতিমধ্যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে পড়েছে। নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে? দেশটা কি মগের মুলুক? দিনদুপুরে এভাবে খুন সিনেমার নৃশংসতাকে হার মানাবে।
যে দুই যুবক এই প্রকাশ্যে হত্যালীলা চালালেন, তারা কারা? কি তাদের পরিচয়? তাদের এমন ক্ষমতার পেছনে কে আছেন? এসব জানতে উন্মুখ দেশবাসী।
ইতিমধ্যে হত্যাকারী দুই যুবকেরই পরিচয় জানা গেছে এবং চন্দন নামে তাদের একজন সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে স্থানীয় পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকারী দুই জনের একজনের নাম সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে ‘নয়ন বন্ড’ (২৫)। অনজনের নাম রিফাত ফরাজী।
তারা দুইজনই অপরাধ জগতের বেশ পরিচিত মুখ বলে জানিয়েছে বরগুনা পুলিশ।
স্থানীয়রা এই দুই সন্ত্রাসীর তাণ্ডবে বেশ অতিষ্ট বলে জানিয়েছেন। তাদের ভয়ে অনেকেই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছিলেন না। প্রায়ই নানা অযুহাতে লাঞ্ছিত হতেন স্থানীয়রা। প্রতিবেশীদের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক বিরাজ করত এ দুইজনের নাম শুনলে।
এসব এলাকাবাসীদের ওপর এসব অত্যাচার করে বিভিন্ন সময় তাদের জেল খাটতে হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। কিন্তু খুব অল্প সময়েই হাজত থেকে বের হয়ে আসতেন অদৃশ্য কারণে। আর ফিরেই তাদের তাণ্ডবলীলার পরিমাণ আরও বেড়ে যেত।
হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ছিলেন কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে বরগুনায় ইয়াবা, ফেন্সিডিল, হেরোইন ও দেশীয় অস্ত্রসহ নয়নকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
সে সময় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ৫ মার্চ রাত ১১টায় নয়ন বন্ডের বাসায় অভিযান চালায় বরগুনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এ সময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক, দুটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার হয়। এসব মাদকের মধ্যে ছিল ৩০০ পিস ইয়াবা, ১২ বোতল ফেনসিডিল ও ১০০ গ্রাম হেরোইন।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বরগুনা সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও অস্ত্র আইনে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগী ইমামের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন। সেই মামলায় দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে আসেন নয়ন বন্ড।
আর জেল থেকেই বেরিয়েই এ হত্যাকাণ্ড ঘটান নয়ন।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবীর হোসেন মাহমুদ বলেন, নয়ন বন্ড একজন মাদক কারবারি। তার বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় সাজাও খেটেছেন কয়েকবার। রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত নয়নসহ সবাইকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা সরকারি কলেজের দক্ষিণ-পশ্চিমে বরগুনা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নয়ন বন্ড। নয়নের বাবা মৃত ছিদ্দিকুর রহমান। নয়নের বড় ভাই মিরাজ সিঙ্গাপুর প্রবাসী।
প্রসঙ্গত গতকাল বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
বুধবার সকাল ১০টার দিকে নয়নের নেতৃত্বে ৪-৫ জন সন্ত্রাসী রিফাতকে দা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে যায়।
স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে এভাবে খুন হতে হয় বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবার।(সূত্রঃ যুগান্তর)