আত্মবিশ্বাসী নারীর এগিয়ে যাওয়া

এ এস এম জসিম
এ এস এম জসিম, বার্তা সম্পাদক
প্রকাশিত: ০১:৪০ পিএম, ১১ জুন ২০১৯

রুবাইয়া পারভীন রীতিসহিদুল ইসলাম স্বপ্নঃ
আত্মবিশ্বাস হল জীবনে সফল হওয়ার মূলমন্ত্র। আত্মবিশ্বাসী না হলে জীবনে সফল হওয়া যায় না। জীবনে চলার পথে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে। কিন্তু যারা আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান, তারা সহজে হাল ছাড়ে না। লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত চলতেই থাকে তাদের সংগ্রাম। যত বাধাই আসুক কিছুই তাদের থামিয়ে রাখতে পারে না।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা ভাবি। বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানিরা আমাদের বঞ্চনা করেছে। আমাদের টাকায় আমাদের সম্পদে তারা পাহাড় গড়েছে। তারপর আমরা যখন আমাদের ন্যায্য অধিকার চাইলাম, তখন ওরা আমাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাতে লাগল। ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে অতর্কিতে আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। নির্বিচারে হাজার হাজার নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষ হত্যা করল। সেই জুলুম আমরা মেনে নিইনি। আমরা তার শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম। আমাদের না ছিল অস্ত্র-শস্ত্র, না ছিল সামরিক প্রশিক্ষণ। কিন্তু আমাদের বাংলা মায়ের দামাল ছেলে-মেয়েরা আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান ছিল। তারা শত বাধা অতিক্রম করেও বিজয় ছিনিয়ে এনেছে।

জীবনে বড় হতে হলে গুনের অধিকারী হতে হবে। তাহলেই মানুষের মাঝে বেঁচে থাকা যায় অনন্তকাল। মন-প্রাণ দিয়ে স্মরণ করবে তোমাকে , তুমি ভালবাসা পাবে সকলের। আত্মবিশ্বাস, আত্মমর্যাদা,আত্মদান, শ্রদ্ধা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা ইত্যাদি মানবিক মূল্যবোধগুলো অর্জন করে তোমাকে নৈতিকবলে বলিয়ান হতে হবে। তবেই হবে মানুষ।

রাজনীতির মাঠ ও অর্থনীতির সমীকরণ থেকে শুরু করে খেলাধুলায় দুর্দান্ত গতিতে বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নারী। এই অগ্রযাত্রার পথ মসৃণ নয়, এখনো নারীর প্রতি সহিংসতায় কেঁপে ওঠে বিশ্ব বিবেক।

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেছেন, বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি রাজনীতি, অর্থনীতি ও নেতৃত্বে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। নারী ক্রিকেটাররা, ফুটবলাররা মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, অন্য দেশের খেলোয়াড়দের পরাস্ত করছে। তখন আমরা আশার আলো দেখি। আমরা নারী ক্ষমতায়নের কথা বলি। কিন্তু এখনো নারীকে অর্থের অভাবে রাস্তায় সন্তান প্রসব করতে হয়। আমরা নারী দিবসের রং নিয়ে চিন্তা করি। রং বা দিবস তো দূরের কথা, এখনো প্রত্যন্ত এলাকার নারী তার ন্যূনতম অধিকারের কথাও জানে না।

কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘সময় এখন নারীর’— এ কথার সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত নই। বিশ্বজুড়ে নারীর প্রতি মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। প্রত্যন্ত গ্রাম ও নিম্নবর্গের নারীদের অবস্থা শোচনীয়। সমাজকে বদল করতে হবে। তৃণমূল থেকেই পরিবর্তন শুরু করতে হবে। এ জন্য আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, যে নারীকে আপনি সফল বলছেন তার সাফল্যের পেছনেই অনেক কাঁটা-নুড়ি বিছানো। এর মধ্য দিয়েই নারী এগিয়েছে।

বর্তমান সময়ে নারীদের বড় প্রতিবন্ধকতা হলো স্কুল পেরিয়ে কলেজে উঠলেই তাকে কাধে নিতে হয় সংসারের দায়িত্ব আর সেই দায়িত্ব পালন করতে করতে এক সময় ভুলে যায় সে তার অস্তিত্ব কে কিন্তু কিছু কিছু মানুষ থাকে যারা আত্মবিশ্বাসী মানুষ যারা শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে নিজেকে তুলে ধরার প্রত্যয় নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে প্রমান করে দেয় নারীরা পিছিয়ে নেই…..

আজ তেমনই এক নরীর কথা আমরা জনবো তিনি হলেন রুবাইয়া পারভীন রীতি। তিনি গতানুগতিক নিয়মে পড়াশোনা না করে এমন একটি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেন তা অমেকেই ভাবেন না। আর সেই সিদ্ধান্ত কে কাজে লাগিয়ে জীবনকে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন রীতি।

রীতি ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন মুখরোচক খারার রান্না করা পছন্দ করতেন, বয়স বাড়ার সাথে সাথে তিনি ভাবতে লাগলেন আমারা যা প্রতিনিয়ত খাই তাকে যদি একটু নিয়মে বেধে দিতে পারি তাহলে খাবারের সাথে সাথে আমাদের দেহের পুষ্টির চাহিদাও পূরন হবে। আর সেই সাথে দেশ ও নতুন প্রজন্ম হয়ে উঠবে সমৃদ্ধ।

তার এ ভাবনার ফলশ্রুতিতে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কে বেছে নিলেন তিনি ভাবলেন এখন সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত তাই তিনি রিৎজ কিচেন নামে তার সচেতনতার বার্তা পৌছাতে লাগলেন। রিৎজ কিচেন ফেইজবুক গ্রুপে তিনি সচেতন মূলক লেখা, ছবি ও টিপসদেয়া সহো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লাইভে এসে সচেতনতার পরমর্শ দেন ও অনেকের প্রশ্নের উত্তর দেন। আগামী দিনের বেশ কিছু পরিকল্পনা ও আছে তার। সেই সব পরিকল্পনা ও তার ব্যক্তিগত ভাবন নিয়ে আর যা বল্লেন তিনিঃ-

আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় হল আমি একজন সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী নারী৷ ছোটবেলা থেকেই আমার মা বাবা ও পরিবারের সকলের দুয়ায় আমার আত্মবিশ্বাসকে আমি অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে কাজে লাগিয়ে এসেছি। আমি যখন কোন কাজ করি নিজের লাভ না দেখে চেষ্টা করি কিভাবে মানুষের উপকারে আসতে পারবো। আমার নিজের স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি গ্রুপ আছে " রিৎজ কিচেন " নামে যেখানে প্রায় ছয় হাজারেরও বেশি সদস্য রয়েছেন। তারা সবাই আমার দেয়া স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ দ্বারা উপকৃত হন। আমি বাংলাদেশের জনপ্রিয় দুইজন শেফতারকার থেকে রান্না বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়েছি এবং এই বিষয়ে আমার বিশেষ সার্টিফিকেট রয়েছে। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞানের উপর আমি বি.এস.সি ও এম.এস করেছি।
স.এস.সি ও এইচ.এস.সি তে আমার জিপিএ ৫ ছিলনা। নানা রকমের সমস্যার মধ্য দিয়ে সময় পার করার কারনে বি.এস.সিতে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উত্তির্ন হই। তবে কথায় আছে শেষ ভাল যার সব ভাল তার। এম.এস পরীক্ষায় আমি প্রথম শ্রেণীতে উত্তির্ন হয়েছি। আমার শুধুমাত্র বই পড়তে ভাল লাগতো না। বইয়ের পাশাপাশি আমি সবসময় যেকোন বিষয়ের বাস্তবিক জ্ঞান নিতেও ভালবাসতাম। অসহায় শ্রেণীর মানুষ হতে শুরু করে উচ্চ শ্রেণীর মানুষের সাথে আন্তরিকভাবে মিশে তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা বুঝার চেষ্টা করেছি। আমার মায়ের দুই বছর আগে ক্যান্সার ধরা
পড়ে। উনার পুরো চিকিৎসার দ্বায়িত্ব আমি নিয়েছিলাম। তাই ক্যান্সার রোগীদের খাদ্যাভ্যাস ও খাবারের ডায়েট কেমন হওয়া উচিত এটি খুব ভালভাবে গবেষণা করে বের করেছিলাম। এই পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন ক্যান্সার রোগীরা আমার দেয়া ডায়েট চার্ট অনুসরণ করছেন। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন নিম্নর রোবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের মানুষ। অন্যান্য প্রায় ১৫০ জন রোগীরা আমার দেয়া ডায়েট চার্ট অনুসরণ করে অনেক উপকৃত হয়েছেন। আমার এম.এস পরীক্ষার ফাইনালের চার দিন আগে আমার মা এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গিয়েছেন। উনি বেঁচে থাকলে আমার প্রথম শ্রেণীতে উত্তির্ন হোয়ার ফলাফল শুনে অনেক খুশি হতেন। এখন নিজের জ্ঞানকে সবার সাথে শেয়ার করতে চাই এবং আমি চাই ক্যান্সাগীদের জন্য কাজ করতে।

রুবাইয়া পারভীন রীতি
পুষ্টিবিদ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)