পাথরঘাটায় ছেলের সুদের টাকার খেসারত দিলেন বাবা!

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় ছেলে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদারেরা বাবার গরু ও রিকশা নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মৌজ আলী (৬৫) নামের বর্গাচাষি ওই বাবা অভিযোগ করেছেন, তাঁর চারটি গরু ও একটি রিকশা পাওনাদারেরা নিয়ে গেছে। এ নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে বিচার চেয়েও পাননি। গতকাল সোমবার বিকেলে তিনি পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবিরের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, গরু ও রিকশা নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলি ইউনিয়নের তালুক চরদুয়ানী গ্রামে।
এর আগে ঘটনাটি পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবিরের কাছে জানানো হয়। ঘটনার দুদিন পর শনিবার তিনি রিকশা ফেরত এনে দেন। তবে পাঁচ দিনেও গরু ফেরত দেয়নি পাওনাদারেরা।
যাঁদের বিরুদ্ধে মৌজ আলী অভিযোগ করেছেন, তাঁরা হলেন কাঁঠালতলি ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ও কাঁঠালতলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল সিকদার, তালুক চরদুয়ানী ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য রহমান খলিফা, তাঁদের সহযোগী রুহুল আমিন, মোফাজ্জেল খলিফা, রুবেল হোসেন ও বেলাল হোসেন।
বর্গাচাষি মৌজ আলী অভিযোগ করেন, তাঁর দুটি দুধের গাভিসহ চারটি গরু বাড়ির পাশে মাঠে বাঁধা ছিল। বাবুল সিকদার ও আবদুর রহমান খলিফার নির্দেশে রুহুল আমিন, মোফাজ্জেল খলিফা, রুবেল হোসেন, আবদুর রহিম ও বেলাল হোসেন মাঠ থেকে গরু চারটি নিয়ে যান। এর কিছু পর বাড়ির সামনে এসে তাঁর রিকশাটিও নিয়ে যান।
মৌজ আলী বলেন, ‘তারা হুমকি দিয়ে বলে, “তোর ছেলে নজরুল আমাদের কাছ থেকে সুদে ১৫-২০ লাখ টাকা নিয়েছে। টাকা না দেওয়ায় তোর রিকশা ও গরু নিয়ে গেলাম। ভালো চাইলে টাকা নিয়ে আসিস”।’
এ ঘটনা স্থানীয় কাঁঠালতলি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামকে জানানো হলে তিনি গত পাঁচ দিনেও কোনো ব্যবস্থা নেননি।
এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যত দূর জানি, মৌজ আলী ও তাঁর ছেলেদের সঙ্গে সুদের টাকা নিয়ে দেনা–পাওনা আছে। তবে কাঁঠালতলির চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য বাবুল সিকদার এ বিষয়টি ভালো জানেন।’
কাঁঠালতলি ইউপির চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘টাকা পাওয়ার বিষয়টি আমি জানি। তবে কত টাকা, তা আমার জানা নেই। মৌজ আলী এ ঘটনা নিয়ে একবার আমার কাছে এসেছিলেন, পরে আর আসেননি।’
কাঁঠালতলি ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মাধবী রানী বলেন, ‘মৌজ আলী একজন ভালো মানুষ। তাঁর ছেলে নজরুলের কাছে মানুষ টাকা পাবে বলে জানি।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে কাঁঠালতলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল সিকদারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
তালুক চরদুয়ানী ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য আবদুর রহমান খলিফা বলেন, ‘মৌজ আলীর ছেলেকে আমরা এনজিও থেকে সুদে টাকা এনে দিয়েছি। ওই টাকা দেওয়ার সময় মৌজ আলীকে জানিয়ে দিয়েছি, তাই তাঁর গরু নিয়ে আসা হয়েছে। তবে আমি তাঁর গরু নিইনি।’
এ ঘটনায় চরম হতাশ মৌজ আলী বলেন, ‘গরুগুলো দিয়ে বৃদ্ধ বয়সে বর্গা চাষ করে, দুধ বিক্রি করে কোনো মতে বেঁচে আছি। তবু সংসার চলে না। এক বেলা গরুর দুধ বিক্রি করি। আরেক বেলা রিকশা চালাতে হয়। ছেলেমেয়েরা আলাদা সংসারে চলে গেলেও আমরা বুড়া–বুড়ি এ গরু নিয়েই বেঁচে আছি। পাঁচ দিন ধরে গরু চারটি কেমন আছে, তাও জানি না।’(তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো)