জাতির “মেরুদন্ডে উই পোঁকা”র আক্রমন
মো. কাসেম রাসেল
জাতির মেরুদন্ড শিক্ষা। একটি শিক্ষিত জাতি তার মেধা দিয়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক, আর্ন্তজাতির সকল ক্ষেত্রেই সাবলম্বি হতে পারে। এক কথায় একটি জাতি উন্নত শিখরে উঠতে হলে বা উন্নত রাষ্ট্রের সাথে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতে হলে শিক্ষাই তার মূলক অস্ত্র। বর্তমানে শিক্ষা ক্ষেত্রে নৈরাজ্য, অনিয়ম, দুর্ণীতি, দায়িত্বহীনতা এবং নীতি বহিঃভূত কাজে সম্পৃক্তসহ প্রশ্ন পত্রের ফাঁসের যে ঘটনা দেখা যাচ্ছে তাতে জাতির মেরুদন্ডে উই পোঁকায় আক্রমন করেছে।
“প্রশ্ন ফাঁস” এই কুৎসিত শ্লোগানের কারনে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার আগে পাঠে মনেনিবেশ না করে ফেসবুকে “প্রশ্ন ফাঁস” নামক ভাইরাসটি খুজে বেড়ায়। মাঝে মাঝে দেখা যায় এই অন্ধকার গলিতে অভিভাবকরাও ওঁৎ পেতে বসে থাকে। জানিনা এই অভিভাবকরা তার ছেলেমেয়েকে ভালবাসছে না ভাল ভাবে ফাঁসাচ্ছে। তার সন্তানকে শিক্ষার দিকে ধাবিত না করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেনাতো ? আর যারা দায়িত্ব পালন করছেন তারা কি তাদের নৈতিকতার পরিচয় দিচ্ছেন না দেশকে আগুনের গুহায় ফেলে দিচ্ছেন?
শিশু তার মায়ের কোলে যেমন নিরাপদ, ঠিক তেমনি শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকের কাছে নিরাপদ। শিক্ষক তার শিক্ষার্থীকেকে শুধু মাত্র একাডেমী শিক্ষা দিবে এটাই কি শিক্ষকের দায়িত্ব। শিক্ষার্থীকে একাডেমী শিক্ষা দেয়ার পূর্বে তাকে নৈতিক ভাবে শিক্ষিত করে তোলা একজন আদর্শ শিক্ষকের প্রথম দায়িত্ব। শিক্ষক যখনই তার শিক্ষার্থীকেকে নৈতিক ভাবে শিক্ষিত করতে পারবে তখনই উই পোঁকার ডিম্বানু নষ্ট করা সম্ভব হবে।
প্রাথমিক, এসএসসি, এইচএসসি, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নামক ঘটনার সংবাদ দেখলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধরদের যখন প্রশ্ন করা হয় স্বাধীন দিবস কত তারিখ? বিজয় দিবস কত তারিখ? আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কত তারিখ? আর উত্তরে পাওয়া যায় “মনে পরতেছে না”। কিন্তু তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় তোমার এসএসসি রেজাল্ট কি? মাথা উঁচু করে বলে গোল্ডেন এ প্লাস। এই শিক্ষিত জাতির বোঝা কে বহন করবে?
প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা যখন ঘটে তখন শিক্ষকদের উপর তার দায়ভার দেওয়ার চেষ্টা চলে। আসলে কি প্রশ্নে ফাঁসের ঘটনার সাথে শিক্ষকরা জড়িত না অন্য কেউ। এব্যাপারে বার বার সরকার উদ্যোগ নিয়ে সফলতা অর্জন করলেও প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে পারছে না। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা কিংবা স্বার্থসিদ্ধ করা যেটাই হউক প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে এটাই বাস্তবতা । যারা নিজের নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে এ কাজটি করছে তারা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু এবং দেশদ্রোহীও বটে।
পরিবারের কর্তার কথা যদি পরিবারের লোকজন না মানে তাহলে সে পরিবারের আদর্শ কর্তা হতে পারে না। রাস্তায় যদি টাকা পেয়ে তা নিজে ভোগ না করে সঠিক মালিক খুঁজে প্রদান করা হয় তাহলে সে একজন আদর্শ মানুষ। তেমনি একজন শিক্ষক যদি তার শিক্ষার্থীকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারে পরীক্ষায় আগে “আলেয়া নামক মরণ ব্যাধি” (প্রশ্ন) তার চারপাশে ঘুরে বেড়ালেও সে তা গ্রহণ করবে না। তাই আবারও বলি শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড আর এই শিক্ষা নামক পরশ পাথরের ধারক ও বাহক একজন শিক্ষক। শিক্ষক যদি “পরশ পাথর” প্রদান করার আগে শিক্ষার্থীকে নৈতিক ভাবে শিক্ষিত করে নেয় তাহলে উই পোকা নিজ থেকেই ধ্বংস হয়ে যাবে।
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/৯ মার্চ