ফাইনালের দুঃখ ঘুচিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

আবু জর রফি
আবু জর রফি, সাব-এডিটর
প্রকাশিত: ০৬:১৮ এএম, ১৮ মে ২০১৯

চ্যাম্পিয়ন
এতদিন ফাইনাল ছিলো বাংলাদেশের দুঃখ। লম্বা সময় ধরে রাখা সেই দুঃখ অবশেষে ভুললো বাংলাদেশ। ফাইনাল জিতলো বাংলাদেশ পাঁচ উইকেটে। হলো চ্যাম্পিয়ন। আয়ারল্যান্ডে তিনজাতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন। শেষ ১৮ বলে বাংলাদেশের জয়ের টার্গেট দাড়ায় ২৭ রান। স্পিনার অ্যালেনের করা সেই ওভারে মোসাদ্দেক হোসেন যা করার সব একাই করে দিলেন। সবমিলিয়ে সেই ওভারে বাংলাদেশ পেলে ২৫ রান। এই ২৫ রানের সবগুলোই মোসাদ্দেকের! তিন ছক্কা ও বাউন্ডারিতে মোসাদ্দেক আদায় করলেন সেই ওভারে ২৫ রান। মাত্র ২০ বলে পেলেন হাফসেঞ্চুরি। আর তাতেই বাংলাদেশ জয়ের বন্দরে।

শেষ ১২ বলে তখন ম্যাচ জিততে বাংলাদেশের চাই মাত্র ২ রান। জয়ের শেষ বাউন্ডারিটাও পরের ওভারে এলো সিনিয়র ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে উড়ে! অন্যপ্রান্ত মোসাদ্দেক তখন বুম বুম ব্যাটসম্যান! মাত্র ২৪ বলে ৫ ছক্কা ও ২ বাউন্ডারিতে অপরাজিত ৫২ রানের আগুনে ইনিংস তার।

একেই বলে ব্যাটিং দাপট। একেই বলে ক্লিনিক্যাল ফিনিশিং!

শুরুটা হলো যাকে বলে ধামাকা, তাই! পাঁচ ওভারের পাওয়ার প্লে’তে সত্যিকার অর্থেই ‘পাওয়ার’ দেখালো বাংলাদেশ। আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে বললে- সৌম্য সরকার! প্রথম পাঁচ ওভারেই বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা কোনো ক্ষতি ছাড়াই ৫১ রান। শুরুর এই ৫১ রানের মধ্যে সৌম্যর একারই রান ৩৯! দলের রান রেট ১০ এর ওপর। মাত্র ২৭ বলে হাফসেঞ্চুরি পেলেন সৌম্য। ৮ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায়।

অন্যপ্রান্তে তখন তামিম ইকবাল বেশি খেলার সুযোগই পাচ্ছেন কই? ১৩ বলে ১৮ রান করে তামিম ফিরলে ব্যাটিংয়ে প্রমোশন পেয়ে তিনে এলেন সাব্বির রহমান। কিন্তু ভেতরে আসা বল পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে বিপদ বাড়ান সাব্বির। এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন। বলটা লেগস্ট্যাম্প মিস করছিলো কিনা- সেই দাবি জানানোর উপায় যে নেই। এই সিরিজে ডিআরএস যে ছিলো না!

একই ওভারে তামিম ও সাব্বিরকে হারিয়ে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। তবে সেই সমস্য খুব একটা বুঝতে দিলো না সৌম্যের ব্যাট। মুশফিকের সঙ্গে জুটিতে সৌম্য রুখে দাড়ালেন। কিন্তু শুরুতে যে গতিতে রান তুলছিলেন তাতে কিছুটা রাশ টানলেন। হাফসেঞ্চুরির পর খেলা ১৪ বলে সৌম্যর রান মাত্র ১৬! শুরুর ঝড়ের সঙ্গে মাঝের এই গুটিয়ে যাওয়াটা ঠিক মানিয়ে উঠতে পারলেন না সৌম্য। রানরেট বাড়ানোর তাগিয়ে ভুল বলকে শট খেলার জন্য বেছে নিলেন। ৩ ছক্কা ৯ বাউন্ডারিতে ৪১ বলের তার ইনিংসটা শেষ হলো ৬৬ রানে।

সৌম্য ফেরার পর মুশফিকের ব্যাট সাহস ছড়াচ্ছিলো। স্বপ্ন দেখাচ্ছিলো। কিন্তু আম্পায়ার রিচার্ড ক্যাটেলব্রো তাকে যে বলে এলবিডব্লিউ দিলেন তা দেখে মুশফিকের আফসোস করারই কথা। বলটা যে লেগস্ট্যাম্প মিস করছিলো নিশ্চিতভাবেই!

শেষ ৫৪ বলে জিততে চাই ৬৮ রান। হাতে জমা ৬ উইকেট। খুব কি কঠিন কোনো কাজ? কিন্তু সহজ বল জটিল ভঙ্গিতে খেলতে গিয়ে মোহাম্মদ মিঠুন ১৭ রানে আউট হয়ে দলের বিপদ যে বাড়িয়ে দিলেন। সোজা আসা বলে হঠাৎ তার মনে হলো রিভার্স সুইপ খেলি। বলের লাইন মিস করলেন। পরিস্কার এলবি।

শেষের ব্যাটিংয়ের ভরসা হয়ে দাড়িয়ে তখন শুধু মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এই দুজনে শেষে যে ব্যাটিং করলেন সেটা বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক দিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মাত্র ৪৩ বলে এই দুজনের জুটি এলো ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ৭০ রান।

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা হয় দুর্দান্ত। ওপেনিং জুটিতেই তারা ২০.১ ওভারে ১৩১ রান তোলার পর বৃষ্টি নামে। বৃষ্টির সেই তোড়ে ম্যাচের প্রায় পাঁচ ঘন্টা সময় নষ্ট হয়। উভয় দলের জন্য ম্যাচের ওভার কমিয়ে আনা হয় ২৪ ওভারে। নির্ধারিত সেই ২৪ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ উইকেট তোলে ১৫১ রান। কিন্তু বৃষ্টি আইনের গিট্টুতে পড়া বাংলাদেশের জন্য ২৪ ওভারে ম্যাচ জয়ের টার্গেট দাড়ায় ২১০ রান।

যা পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ ৭ বল হাতে রেখেই। বহুজাতিক ক্রিকেটের ফাইনাল মানেই এতদিন ছিলো বাংলাদেশের জন্য হতাশা এবং কষ্টের অন্য নাম। ওয়ানডে এবং টি-টুয়েন্টি মিলিয়ে এর আগে ছয়টি ফাইনাল হেরেছিলো বাংলাদেশ। সপ্তমবারের ফাইনালে এসে কাটলো ফাইনালের গেঁরো!

জ্বি, এখন বুক ফুলিয়ে বলতেই পারেন-বাংলাদেশও ফাইনাল জেতে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর-
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৫২/১ (২৪ ওভারে, হোপ ৭৪, আমব্রিস ৬৯*, ব্রাভো ৩*, মিরাজ ১/২২)।
বাংলাদেশ: ২১৩/৫ (২২.৫ ওভারে, তামিম ১৮, সৌম্য ৬৬, সাব্বির ০, মুশফিক ৩৬, মিঠুন ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১৯, মোসাদ্দেক ৫২*, গ্যাব্রিয়েল ২/২৩, অ্যালেন ১/৩৭)।
ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
সিরিজ সেরা: শাই হোপ।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)