ডাক্তার নামধারী মাস্তান ডাক্তার আনোয়ার উল্লাহ
সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের অভাব নেই। অভাব নেই চিকিৎসকেরও। অভাব রয়েছে শুধুই সৎ ও নিষ্টাবান চিকিৎসকের। কসাইয়ের মতো আচরণ করা চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই।
প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর পত্রিকা হাতে নিলে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লগইন করলেই দেখা যায়- প্রসূতি মায়ের সিজার করাতে গিয়ে চিকিৎসকের ভুলে মৃত্যু হচ্ছে সন্তান না হয় মায়ের। আবার কোথাও দেখা যাচ্ছে চিকিৎসকরা সিজার করিয়ে মায়ের পেটের ভিতরেই রেখে আসছেন অস্ত্রোপচারের যন্ত্রাংশ।
একটা কিংবা দুটো ঘটনাতেই যে এসব অসৎ-মাস্তান প্রকৃতির চিকিৎসকদের অপকর্মের সীমাবদ্ধতা রয়েছে তাও কিন্তু নয় পাঠক। হাজারো অভিযোগের তালিকা রয়েছে অসৎ ও মাস্তানের ন্যায় আচরণ করা শত শত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি এমনই আরেক মাস্তান প্রকৃতির চিকিৎসক বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আনোয়ার উল্লাহর চেহার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে দেখতে পেয়েছে দেশবাসী।
যদিও মাস্তান প্রকৃতির চিকিৎসক আনোয়ার উল্লাহর বিরুদ্ধে অতীতেও একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে বলে সাম্প্রতিক ঘটনার পর প্রকাশ পাচ্ছে। তবুও চিকিৎসকহীনতার কারণে তার অতীত অপকর্মের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে নীরবে সহ্য করে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে অচেতন অবস্থায় পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় কিশোর ছেলে জিলানী। অথচ হাসপাতালে নেয়ার দীর্ঘ এক ঘণ্টার পরও সেই অসুস্থ্য মাকে কোনো চিকিৎসা না দিয়েই হাসপাতালের ফ্লোরে ফেলে রাখে নার্স ও চিকিৎসকরা।
মায়ের কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে ছেলে তাকে ফ্লোর থেকে নারী ওয়ার্ডের একটি বেডে তোলে। এ সময় এক নার্স এসে নিষেধ করলে নিষেধ উপেক্ষা করেই মাকে বেডে তোলে ছেলে। এর কিছুক্ষণ পরই মাস্তান প্রকৃতির ডাক্তার আনোয়ার উল্লাহ এসে অসুস্থ মায়ের সামনেই ছেলেকে মারধর করার পাশাপশি অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ (যা প্রকাশযোগ্য নহে) শুরু করে।
তার অপরাধ কেন সে তার মাকে বেডে তুলেছে! হাসপাতালে উপস্থিত সবার সামনেই ছেলেকে মারধর করে আহত করে ডা. আনোয়ার উল্লাহ। এমনটাই দেখা যায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে এবং সাংবাদিকদের এমনটাই জানায় অসুস্থ মায়ের সেবাপ্রার্থী ছেলে জিলানী।
এদিকে, পুরো ঘটনার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে অনেকেই ওই ডাক্তারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। সেই সঙ্গে ওই ডাক্তারের বিচারও চেয়েছেন স্থানীয়রা। মাস্তান ওই ডাক্তারের মারের আঘাতে আহত জিলানী পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া এলাকার মো. নেছার উদ্দিনের ছেলে।
মোবাইলে যে রেকর্ড করার অপরাধে মাস্তানের হাতে মারধরের শিকার হয়েছে জিরানী সে ঘটনার পুরো ভিডিওই কেউ একজন মোবাইলে ধারণ করেন এবং ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। পরে সেটি কম সময়ের মধ্যে দেশব্যাপী ভাইরাল হয়ে আলোচিত ঘটনায় রূপ নেয়।
ভাইরাল হওয়া ৫৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. আনোয়ার উল্লাহ হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে তেড়ে এসে জিলানী নামে এক কিশোরকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। হাসপাতালের নার্স, কর্মী ও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সামনে প্রকাশ্যে ওই কিশোরকে মেরে আহত করেন ডা. আনোয়ার উল্লাহ।
এসময় হাতে স্যালাইন লাগানো এক নারী রোগী ডা. আনোয়ার উল্লাহকে নিবৃত্ত করতে গেলে বাধা উপেক্ষা করে জিলানীকে মারধরের পাশাপাশি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
তবে মারধরের শিকার হওয়ার পরও ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ওই কিশোরকে ডাক্তারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। ভিডিওতে শোনা যায় ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে ওই কিশোর বলেছে, অপরাধ করেছেন আপনারা, আর হেইতে কতা কইলে মোগো শাস্তি।
জিলানীর ভাষ্য, আমার মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সোমবার সকাল ১০টার দিকে অচেতন অবস্থায় পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। হাসপাতালে নেয়ার পর দীর্ঘ এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আমার মাকে কোনো চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতালের ফ্লোরে ফেলে রাখেন নার্স ও চিকিৎসকরা।
মায়ের কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে পরে আমি তাকে ফ্লোর থেকে নারী ওয়ার্ডের একটি বেডে তুলি। এসময় এক নার্স এসে আমাকে নিষেধ করলে আমি তার নিষেধ উপেক্ষা করি। এর কিছুক্ষণ পরই ডা. আনোয়ার উল্লাহ এসে আমাকে মারধর করার পাশাপশি অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন। সবার সামনে আমাকে মারধর করে আহত করেছেন ডা. আনোয়ার উল্লাহ।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীন বলেন, ডা. আনোয়ার উল্লাহর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ প্রথম নয়। এর আগেও আমরা এ ধরনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে শুনেছি। কিন্তু পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটের কারণে তখন আমরা কোনো কথা বলিনি। কিন্তু এখন এই সীমা অতিক্রম করেছেন ডা. আনোয়ার উল্লাহ। আমরা তার শাস্তির দাবিতে এবার সোচ্চার হবো।
রোগীর স্বজনকে মারধরের কারণ জানতে চাইলে ডা. আনোয়ার উল্লাহ বলেন, নারী ওয়ার্ডে এক কিশোর ডাক-চিৎকার করছে, নার্সদের কাছে এ কথা শুনে আমি নারী ওয়ার্ডে যাই। এসময় ওই কিশোরের কথা আমি মোবাইলে রেকর্ড করতে চাইলে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।
তখন আমি তাকে মারধর করি। মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হলে ওই কিশোরকে পুলিশে সোপর্দ না করে মারধর করা ঠিক হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি ডা. আনোয়ার উল্লাহ।
এ বিষয়ে জানতে বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন শাহিন খানের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি তিনি।
বরগুনার জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে এরকম ঘটনা যদি ঘটে থাকে, তাহলে একটি নিকৃষ্টতম ঘটনা ঘটিয়েছেন ওই চিকিৎসক। আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
বিস্তারিত দেখুন ভিডিওতে