মহানবী (সা.) জীবনে পবিত্র রমজান
রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান আসার আগেই রমজান মাসের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতেন এবং রজব মাসের চাঁদ দেখে মাহে রমজান প্রাপ্তির আশায় বিভোর থাকতেন। হাদিস শরিফে এসেছে : মহানবী (সা.) রজব মাস এলেই এ দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা রমাদান’- ‘হে আল্লাহ! আপনি রজব ও শাবানের মধ্যে আমাদের জন্য বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ শাবান মাসে তিনি বেশি বেশি রোজা রেখে রমজানের রোজার প্রস্তুতি নিতেন।
রমজানুল মোবারকের আগমনে মহানবী (সা.) ইবাদতের যাবতীয় উপকরণে রোজার দিনগুলোকে সুশোভিত করে তুলতেন। সাজিয়ে নিতেন যাবতীয় ইবাদতে। অত্যন্ত আগ্রহ ও ব্যাকুলতার সঙ্গে তিনি সেহরি ও ইফতার গ্রহণ করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তিন দিন তারাবির নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করেছেন। কিন্তু নিয়মিত সম্মিলিতভাবে জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করলে তা ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই পরবর্তী সময়ে তিনি আর জামাতের সঙ্গে তা আদায় করেননি। হজরত উমর (রা.)-এর যুগে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তারাবির নামাজ পড়ার প্রচলন ঘটে এবং সাহাবায়ে কেরামের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা সুন্নত হিসেবে সাব্যস্ত হয়। প্রিয় নবী (সা.) রমজানে খুব বেশি কোরআন তিলাওয়াত করতেন। হাদিস শরিফে এসেছে : “হজরত জিবরাঈল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে আগমন করতেন এবং কোরআন শরিফ ‘দাওর’ করতেন অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সা.) ও জিবরাঈল (আ.) একে অন্যকে কোরআন শোনাতেন।” (বুখারি : ১৯০২)
রাসুল (সা.) সময় হওয়া মাত্রই ইফতার করতেন। সেহরি খেতেন কিছুটা দেরিতে। ইফতার করতেন ভেজা বা শুকনো খেজুর কিংবা সামান্য পানি দিয়ে। সেহরিতেও পছন্দ করতেন ভেজা খেজুর। তাঁর সেহরি ও ইফতার ছিল খুবই সাদাসিধা। তিরমিজি শরিফের এক বর্ণনায় উল্লেখ আছে, রাসুল (সা.) মাগরিবের নামাজের আগে কয়েকটি ভেজা খেজুর দিয়ে ইফতার সেরে নিতেন। ভেজা খেজুর না থাকলে সাধারণ শুকনো খেজুরই গ্রহণ করতেন। যদি তা-ও না থাকত, তবে সামান্য পানি দিয়েই ইফতার করতেন (তিরমিজি)।
নাসায়ি শরিফের এক বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে : হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) আমাকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘হে আনাস, আমি রোজা রাখতে আগ্রহী, আমাকে আহার করাও।’ আমি তাঁর সামনে কিছু শুকনো খেজুর ও পাত্রে পানি রাখলাম। বেলাল (রা.)-এর প্রথম আজানের পর তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। এই ছিল রাসুল (সা.)-এর সেহরি ও ইফতার। তাঁর প্রিয় সাহাবাদের ইফতারের নমুনাও ছিল এমনই।
সম্প্রতি সেহরি ও ইফতারকে কেন্দ্র করে যে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান ও ভোজনবিলাসিতা লক্ষ করা যায় রাসুলের যুগে, সাহাবাদের যুগে ও পরবর্তী সময়ে ইসলামের সোনালি যুগে এমনটা ছিল না। এর কল্পনাও কেউ করেনি। তদুপরি ইফতার ও সেহরি শুধু খাওয়াদাওয়ার নাম নয়, বরং এগুলো নিখুঁত ইবাদত। এ ইবাদতগুলোকে রাজনৈতিক কর্মসূচির মতো পালন করা ইসলামের আদর্শ নয়। মুসলমানদের জন্য এটি খুবই দুঃখজনক।
ইফতার শেষে নবী (সা.) এ দোয়াটি পাঠ করতেন, ‘জাহাবাজ-জমাউ, ওয়াবতাল্লাতিল উরুকু, ওয়া ছাবাতাল আজরু ইনশা আল্লাহ।’ অর্থাৎ পিপাসা নিবারিত হয়েছে। সিক্ত হয়েছে শিরা-উপশিরা এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হয়েছে (আবু দাউদ)। আল্লাহ তাআলা আমাদের ইবাদত হিসেবে সেহরি ও ইফতার করার তাওফিক দান করুন।
