‘ত্রান লাগবেনা,মোগো ওয়াপদা বাইন্ধা দেন’
হাজার হাজার একর জাগা জমি গাঙ্গে ভাইস্যা গ্যাছে, ঘর বাড়ি এই নিয়া চাইরফির( চারবার) পাল্ডাইছি। এহন আর বাঁচারই উপায় নাই, মোগো ত্রান লাগবেনা, মোগো ওয়াপদা (বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ দেন’। বয়স ৭৫ বছরের বেশী। গণমাধ্যম কর্মীরা বাঁধ দেখতে এসেছেন খবর পেয়ে লাঠি ভর দিয়ে নদী তীরে এসেছেন তাজেম আলী ফকির। তিনি দেখেছেন প্রমত্তা বিষখালীর ভাঙন, দেখেছেন একের পর এক ঘূর্ণিঝড় ও প্লাবন। দেখেছেন অসংখ্য মানুষের মৃত্যু, দুর্দশা ও প্লাবন। ঘূর্ণিঝড় ফণি পরবর্তি বিষখালী তীরের নলী এলাকার বাসিন্দাদের খোঁজ নিতে গিয়ে আশরাফ আলীর মত অনেক বিপদগ্রস্ত মানুষ ভীর জমান। তাঁেদর দাবি, ত্রান দরকার নেই, বাঁধ নির্মাণ করে জীবন ও সম্পদ বাঁচানোর।
ঘূর্ণিঝড় ফণির প্রভাবে বরগুনা জেলায় পানি উন্নয়ণ বোর্ডের প্রায় ২৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে কোনো মুহুর্তে ওইসব এলাকার বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে জীবন ও সম্পদের ক্ষতির আশংকা রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, ফণির প্রভাবে ভাঙন কবলিত এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীনের উপক্রম হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় নিচু বেরিবাঁধ ভেঙে ফসলের মাঠ প্লাবিত হয়েছে।
পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালী তিনটি প্রমত্ত নদ ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় উপকূলীয় বরগুনা জেলার অবস্থান। পাউবো বরগুনা কার্যালয়ের সূত্র মতে সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ফণির প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বরগুনার পাউবোর হিসাব মতে ২২টি পোল্ডারের অন্তত ৩২ টি পয়েন্টের ১৮ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন ও বেরিবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, অন্তত ২৫ কিলোমিটার বাঁধ এই মুহুর্তে ঝুঁিকতে রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার নলী, নলটোনা, দেশান্তরকাঠি, ঝোপখালি, বলইবুনিয়া, পাথরঘাটার কালমেঘা, কাকচিড়া চরলাঠিমারাসহ অন্যান্য উপজেলাগুলোর ১৫ টি স্পটের বাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকিপুর্ণ।
রবিবার সকালে বরগুনা সদর উপজেলার নলী ও আজগরকাঠি এলাকার গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার প্রায় ৭ কিলোমিটার বন্য নিয়ন্ত্রন বাঁধ ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে নলী বন্দর বাজারের উত্তর দিকে দুই কিলোমিটার বেরিবাধের বাইরের অংশ জোয়ারে প্লাবিত হয়ে বাঁধ উপচে লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়াও দক্ষিণের চার কিলোমিটার ভাঙন কবলিত এলাকার বন্য নিয়ন্ত্রন বাঁধের অর্ধেকাংশ কোথাও কোথাও এক তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা শাহনেওয়াজ সেলিম বলেন, ফণির আগেই আমরা বারবার পাউবো’র কর্মকর্তা ও স্থানীয় সাংসদের দ্বারস্থ হয়েছি। ফণিতে বাঁধটি আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন এমন পর্যাায়ে যে, যে কোনো মুহুর্তে স্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হতে পারে। এ নিয়ে চারবার বেরিবাধ দেয়া হয়েছে। কিন্ত একটিও টিকে নেই। সবই ভাঙনে বিলীণ। এখন দরকার নদী শাসন করে স্থায়ী সুরক্ষার ব্যবস্থা করে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মাণ। এছাড়া এ অঞ্চলের মানুষের জান মাল রক্ষা সম্ভব হবেনা। ওই এলাকার আর একজন বাসিন্দা ইমরুল কায়েস। তিনি বলেন, আমাদের বিষখালী তীরবর্তি নলী, আজগরকাঠি, দেশান্তকাঠিসহ এই এলাকার প্রায় ৭কিলোমিটার এলাকার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
নলটোনা এলাকার বাসিন্দা আবু হানিফ বলেন, ফণি আমাদের চরম ক্ষতিতে ফেলেছে। আমাদের ঘর-
বাড়ি অক্ষত থাকলেও জীবনের এখন নিরাপত্তা নেই। কারণ, আমাদের প্লাবন থেকে রক্ষা করে যে বাঁধ, সেই বাঁধেরই অর্ধেকেরও পানির তোড়ে ঢেউয়ে ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ত্রান চাইনা, আমাদের বাঁধ নির্মাণ করা দরকার।
পাথরঘাটার কালমেঘা বাজারের দক্ষিন কুপদোন এলাকার প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের এক তৃতীয়াংশ টিকে আছে। ফণির প্রভাবে এই এলাকার বাঁেধর এ অবস্থা হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এলাকার বাসিন্দা ইউপি সদস্য শাহীন মিয়া বলেন, আমাদের কালমেঘা বাজার থেকে উত্তর ও দক্ষিণে দুই কিলোমিটার এলাকার নদী শাসন করে ব্লক দিয়ে সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্ত দক্ষিনের এ অংশের মেরামতও হয়নি। আমরা এখন অরক্ষিত। আমাদের এই দুই কিলোমিটার এলাকা সুরক্ষার আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
বরগুনা পানি উন্নয়ণ বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, বরগুনার ২২টি পোল্ডারের ৩২টি পয়েন্টের অবস্থা ঝুঁিকপূর্ণ। আমরা ওইসব এলাকা পরিদর্শন করে উর্ধতন কর্মকর্তা ও মন্ত্রনালয়ে বরাদ্দ চেয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। বাঁধগুলো বর্ষা মৌসুমের আগেই সংষ্কার না হলে এলাকার লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।