পাথরঘাটায় এখন শুধু ভয় ৫ ফুট জলোচ্ছ্বাসের উপকূলীয় ৭ নম্বর বিপত্সংকেত
এপ্রিল-মে—এই সময় বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়াকে স্বাভাবিক নিয়ম ধরে নিয়ে বেশ নির্ভার ছিল আবহাওয়া অফিস। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপটি গত শনিবার যখন ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় তখনো এর ভয়াবহতা কেমন হতে পারে তা আঁচ করতে পারেননি আবহাওয়াবিদরা।
এদিকে পাথরঘাটায় অরক্ষিত বেড়িবাঁধ, ঝুঁকিতে উপকূলীয় কয়েকলাখ মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন উপকূলীয় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধে পাথরঘাটার তিনদিকে নদীবেষ্টিত বিষখালী ও বলেশ্বর নদের তীরবর্তী পদ্মা, রুহিতা, জ্বিনতলা, হরিনঘাটা, কাকচিড়া, গাববাড়ীসহ পৌর এলাকা বেশী ঝুঁকিপূর্ণ।
অন্যদিকে সময় যত গড়াচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় ফণী তত শক্তি সঞ্চয় করে এখন উপকূলে আছড়ে পড়ার অপেক্ষায়। ফণী এখন আর ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে (ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ৬২-৮৮ কিলোমিটার) সীমাবদ্ধ নেই। এক্সট্রেমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্ট্রম বা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। যেখানে ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ থাকে ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটারের মধ্যে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, ব্যাপক শক্তি সঞ্চয় করে ফণী আজ শুক্রবার বিকেলে ভারতের ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। তখন বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটারের মধ্যে। এরপর এটি ওড়িশা থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে আজ সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাংলাদেশের বরিশাল, খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে আঘাত হানবে। এরপর সেটি সারা রাত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাবে
ঘূর্ণিঝড়টি এমন সময় বাংলাদেশে আঘাত করতে যাচ্ছে, যখন কৃষকের পাকা বোরো ধান মাঠে; মরিচ, মিষ্টিকুমড়া, রবি ভুট্টা, শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসলও এখন মাঠে। বেশির ভাগ কৃষক তাদের ফসল ওঠাতে পারেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে কৃষকের।
ঘূর্ণিঝড় ফণীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে জলোচ্ছ্বাস নিয়ে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ফণীর প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত কালের কণ্ঠকে বলেন, জলোচ্ছ্বাস জোয়ারের সময় হবে নাকি ভাটার সময় হবে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জোয়ারের সময় যদি জলোচ্ছ্বাস হয়, তাহলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা হবে ব্যাপক। আর যদি ভাটার সময় হয় তখন ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কম হবে
পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ ফুটের উচ্চতায় জলোচ্ছ্ব্াস হলে বরিশাল খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ অনেক বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাঁধ ভেঙে ওই অঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। গত চার দিনে বেশ কয়েকবার গতি বদল করেছে ফণী। এর সব শেষ গতিবিধি অনুযায়ী মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে সাত নম্বর, চট্টগ্রামকে ছয় নম্বর এবং কক্সবাজারকে চার নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। সমুদ্রে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ স্থানে থাকতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ফণী-পরবর্তী জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তাসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও তার অধীন সব দপ্তর আজ ও আগামীকাল শনিবার খোলা থাকবে। বন্দরে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে সব যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ