বিবেকবান সবসময় বিচারকের মুখাপেখী!
মো. কাসেম রাসেল
বিবেক হল এমন একটি অদৃশ্য শক্তি যার ছোয়ায় প্রত্যেকটি মানুষ নিজেই নিজেকে বিচারক হিসেবে দাবী করতে পারে। আর ওই বিবেকই ভালোমন্দের পার্থক্য করে এবং বিচার করে। সমাজের কিছু বিবেকবান মানুষের বিবেকের কাছে দোষী সাবস্ত হয়ে বেকারত্ব জীবন কাটাচ্ছি। বেকারত্ব জীবন মানেই ছন্নছাড়া, চায়ের দোকানে বিনা কারণে বসে থাকা, অকাজকে কাজ হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া।
যাই হোক এই বেকারত্ব জীবনটা অতি কষ্টের ও অসহায়ত্বের। আমি বেকারত্বের কারণে এক আত্মীয় কম্পিউটারের দোকানে সময় কাটাই। এই দোকানে প্রায় সময়ই চোখে পড়ে বিবেক তাড়িত অনেক ঘটনা। নিজের বিবেক কিভাবে বিসর্জন দিচ্ছে। সামান্য জিনিস নিয়ে কথা কাটাকাটি তার জন্য মামলা। তা এখানে সময় না কাটালে বুঝতেই পারতাম না।
উকিল, মহুরী, মোয়াক্কেল। “মোয়াক্কেলের ভাষ্য মতে ও আমাকে মেরেছে ওকে বুঝাইয়া দিতে হবে, মহুরী সাহেব শক্ত করে মামলা লিখবেন।” মহুরী সাহেব লিখতেছেন, “আসামীর হাতে থাকা লোহার রড দ্বারা আমাকে খুনের উদ্দেশ্যে মাথা লক্ষ করিয়া পিটান দিলে উহা আমি ডান হাত থেকে ফিরাইলে ডান হাতে পরিয়া নীলা ফুলা জখম হয়। তখন ১নং স্বাক্ষী আমার স্ত্রী আমাকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে আগাইয়া আসিলে বিবাদীরা অসৎ উদ্দেশ্যে আমার স্ত্রীর পড়নে থাকা কাপড়চোপড় খুলিয়া লজ্জাশরমের ব্যাঘাত ঘটায় এবং আমার স্ত্রীর গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন বিবাদীরা ছিনাইয়া নিয়া যায়।”
জমি ক্রয় করলে মালিকানাস্বত্ব হস্তান্তরের জন্য সরকারি আইন অনুসারে সাব-কবলা দলিল রেজিষ্ট্রীর মাধ্যমে মালিকানা হস্তান্তর করতে হয়। অথচ সরকারি আইনের চোখে ধুলো দিয়ে সাব-কবলা দলিল সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপনের বাধ্যবাধকতা এড়াতে নিজের বিবেককে বিসর্জন দিয়ে নগদ অর্থে জমি ক্রয় করেও সাব কবলা দলিলের স্থলে হেবা বিলওয়াজ (মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান অনুযায়ী উপহারের বিনিময়ে উপহার দেওয়া) দলিল রেজিষ্ট্রিকরণের মাধ্যমে সম্পত্তির মালিক নিযুক্ত হয়। যেখানে উল্লেখ করা হয় “দলিল গ্রহিতা তার নিজ অর্থে দলিল দাতাকে মহাপবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআন, জায়নামাজ ও তসবিহ্ উপহার দিয়েছেন। বিনিময়ে দলিল দাতা সন্তুষ্ট হয়ে দলিল গ্রহিতাকে ঐ সম্পত্তি উপহার হিসেবে প্রদান করেছেন।”
যারা সামান্য সম্পত্তি অর্জনের জন্য মহাপবিত্র ধর্ম গ্রন্থ আল-কুরআন নিয়ে মিথ্যা নাটক সাজায়, তারা নিজের স্বার্থসিদ্ধ করার জন্য মহাপবিত্র ধর্ম গ্রন্থ আল-কুরআন ও সমগ্র মুসলিম জাতিকে পদদোলিত করতে আকুণ্ঠবোধ করবে না। বিবেক-এর কাছে প্রশ্ন একজন মুসলমান কিভাবে এতবড় প্রতারক হতে পারে? হায়রে বিবেক কোথায় তুমি? শুধু এতেই সিমাবদ্ধ নয়, নিজের স্বার্থ সিদ্ধ করার জন্য মানুষ তার নিজের বিবেককে এত জঘন্য ভাবে বিসর্জন দিচ্ছে তাহয়তো সে নিজেও জানে না। বর্তমানে এ রকমের বাস্তবতা দেখে কখনো কখনো মনে হয় বিবেক নামক বস্তুটির অন্যায়ের কাছে হাত পা বাঁধা।
মানুষ যদি নিজের বিবেককে জাগ্রত করে সকল কর্ম পরিচালনা করে তাতে সে নিজেও ভাল থাকবে এবং অন্যকেও ভাল রাখতে পারবে। যদি সমাজের দাবিদার বিত্তবানদের বিবেক জাগ্রত হয় তাহলে হতদরিদ্র খুঁজে পাওয়া যাবে না। পৃথিবীর সকল মানুষের বিবেক জাগ্রত হলে পৃথিবী একটি দেশে রূপান্তিত হতো। সীমান্ত, সীমান্ত রক্ষী, সেনাবাহিনী ও অস্ত্রের প্রয়োজন হতো না। বিবেকই যদি জগ্রত হয়, কে ধনী? কে গরীব ? কে রাজা? কে প্রজা? এটা বিবেকই বলে দিবে। আমাকে সৃষ্টি করেছে কে? আমার ভাইকে সৃষ্টি করেছে কে? আমার পাশের গরীব প্রতিবেশীকে সৃষ্টি করেছে? উত্তর একটাই সৃষ্টিকর্তা। যদি সৃষ্টিকর্তা আমাদের সকলকে সৃষ্টি করে থাকে তাহলে আমার বিবেক আমাকে বলছে পৃথিবীর সকল মানুষ একটি পরিবার। আমার মতে এগুলোই হল বিবেক। সেই জন্য বলি একটি বিবেকবান জাতি সবসময় বিচারকের মুখাপেখী, আর প্রত্যেকটি মানুষ এক একজন বিচারক। আর একজন বিবেকবান বিচারক কখনো অন্যায় করে না।
(লেখকঃ বিবেক দাবিদার সমাজ কর্তাদের প্রশ্নোত্তর প্রত্যাশি)
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/৮ মার্চ