মুস্তাফিজ ম্যাজিকেই হয়তো সম্ভব
অনলাইন ডেস্কঃ সবশেষ ১০ টি-টোয়েন্টির মাত্র একটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। এই পরিসংখ্যান কি আপনার কাছে সন্তোষজনক মনে হয়?’ নিদাহাস ট্রফির প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার আগের সংবাদ সম্মেলনে এটাই ছিল মাহমুদ উল্লাহর দিকে ধেয়ে আসা প্রথম ‘বাউন্সার’! প্রশ্নকর্তা অবধারিতভাবেই একজন ভারতীয় সাংবাদিক। মাইক্রোফোনের সামনে ‘ডাক’ করলেন এই সিরিজে বাংলাদেশ দলে
অধিনায়ক, ‘আমি সেসব নিয়ে ভাবছি না।’
এসবই অবশ্য পোশাকি ভদ্রতা। শুধু টি-টোয়েন্টি কেন, সব ধরনের ক্রিকেটেই যে বাংলাদেশের সময়টা ভালো যাচ্ছে না, সেটা তাঁর চেয়ে ভালো জানে খুব কম লোকই। এই দুঃসময়টা কাটাতে দরকার একটা জয়, যা ফেরাবে হারানো আত্মবিশ্বাস। আর সেই জয়ের মন্ত্রগুপ্তি হয়তো আছে মুস্তাফিজুর রহমানের কাছেই। প্রতিপক্ষ ভারত বলেই তো তাঁকে ঘিরে প্রত্যাশা অনেক।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক পাকিস্তানের বিপক্ষে। তবে ক্রিকেটবিশ্বে মুস্তাফিজ শোরগোল ফেলে দেন ২০১৫-র জুনে দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে, অভিষেক ম্যাচ ও পরের ম্যাচটায় যথাক্রমে ৫ ও ৬ উইকেট নিয়ে। তাঁর অফ কাটারের রহস্য দুই ম্যাচে একবারও বুঝতে পারেননি রোহিত শর্মা, আজকের ম্যাচে মাহমুদ উল্লাহর সঙ্গে টস করতে তিনিই নামবেন। প্রতিপক্ষের অধিনায়ককে মানসিক চাপে ফেলতে মুস্তাফিজকেই হয়তো শুরুতে বোলিংয়ে আনবেন মাহমুদ। কারণ সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে মুস্তাফিজই যে বোলিংয়ে সবচেয়ে বড় ভরসার নাম।
সবশেষ ১০ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের একটিই জয়, সেটি গত বছরের শ্রীলঙ্কা সফরে। আজকের ম্যাচের ভেন্যু প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামেই ১১ মাস আগের সেই ম্যাচে মাত্র ১৭৬ রানের পুঁজি নিয়েও ৪৫ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ, কারণ সেদিন সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যের পাশাপাশি ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। পরের দিকের ম্যাচগুলোতে কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরও পারফরম্যান্স ভালো হয়েছে। বলা যায় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংসও কিছুদিন আগে ঢাকায় করেছিল মাহমুদ উল্লাহর দলই। কিন্তু তাতেই জয় ধরা দেয়নি, বরং ১৯৩ রান তাড়া করে শ্রীলঙ্কা জিতেছিল ২০ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখে। মোদ্দা কথা, রানের খেলা টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটসম্যানরা পারছেন না জেতাতে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছে যে পিচে রান করা সহজ, প্রতিপক্ষ ভারতের ব্যাটিং লাইন আপের কাছে সেটা আরো সহজ। হার-জিতের ব্যবধানটা সেখানেই তৈরি হয়ে যায়। এখানেই ভূমিকা রাখতে পারে ‘ফিজ ফ্যাক্টর’।
দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচে তিনবারই রোহিত শর্মা আউট হয়েছেন মুস্তাফিজের বলে। বেঙ্গালুরুর যে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের কথাটা ভুলেই যেতে চাইবেন সেদিনের দলে থাকা সব ক্রিকেটার, সেই ম্যাচেও রোহিতের উইকেটটা নিয়েছিলেন মুস্তাফিজই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ০ রানে আউট হয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা রোহিতকে যদি বাংলাদেশও পারে শুরুতেই ফিরিয়ে দিতে, তাহলে গোটা ভারতীয় দলেই যে জোরালো একটা ধাক্কা লাগবে, এই নিয়ে কোনো সন্দেহই নেই।
ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে মুস্তাফিজের স্লোয়ার অফ কাটারটা দারুণ এক অস্ত্র। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের ব্যাটিং লাইন আপে বড় কোনো পরিবর্তন যদি আজ না হয়ে থাকে ভারতীয় দলে, তাহলে পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের ভেতর মনীশ পাণ্ডে ব্যাট করেন ডানহাতে। সুরেশ রায়নার শুরুতে পেস বোলিং খেলতে সমস্যা বলে তখন হয়তো তাসকিন আহমেদের হাতেই বলটা তুলে দেবেন অধিনায়ক। শেষের দিকের ওভারগুলোর জন্য হয়তো রুবেল হোসেনেই ভরসা থাকবে। আর মুস্তাফিজের সঙ্গে অন্য প্রান্তে নাজমুল হোসেন অপু যদি রান আটকে রাখতে পারেন, তাহলে চাপ বাড়বে ভারতের ব্যাটসম্যানদের ওপর।
প্রথম মৌসুমেই আইপিএলে ১৭ উইকেট নিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। ভারতীয় দলে যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকের বিপক্ষেই সবচেয়ে বেশি খেলার অভিজ্ঞতা আছে একমাত্র মুস্তাফিজের। সেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে কোর্টনি ওয়ালশের দিকনির্দেশনা আর মাহমুদ উল্লাহর কৌশলী দল পরিচালনা যদি এক বিন্দুতে মিলে যায়, তাহলে স্বপ্ন দেখতে দোষ কোথায়! ভারতের বিপক্ষে জয়ে সব সময় বড় ভূমিকা রেখেছেন বোলাররাই। নিদাহাস ট্রফির প্রথম ম্যাচটি জিতে দুঃসময়কে পেছনে ফেলতে হলে গোটা বোলিং ইউনিটকেই কাজ করতে হবে একই মন্ত্রে, একই ছন্দে। তবে সেই বর্শার ফলাটা হতে হবে মুস্তাফিজকেই।
সুত্রঃ কালেরকন্ঠ / এ এম বি / পাথরঘাটা নিউজ