উপজেলা নির্বাচনে ব্যাক্তিস্বার্থে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ও মদদ দাতাদের শাস্তি দিবে আওয়ামী লীগ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে বেকায়দায় ফেলতে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে। ব্যক্তিস্বার্থে তারা দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে পছন্দের লোকজনকে প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে নামিয়েছেন। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে চরম অসন্তুষ্ট আওয়ামী লীগ। বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দিয়েছেন এমন স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির হাইকমান্ড। একই সঙ্গে সংগঠনকে আরও গতিশীল করতে আগামী অক্টোবরে জাতীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূল থেকে শুরু করে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রতিটি ইউনিটে শাখা সম্মেলন আয়োজনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের নেতৃত্বে আট বিভাগের জন্য পৃথক টিমও গঠন করা হয়েছে।
গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর প্রথম বৈঠক ছিল এটি। বৈঠকে দেশব্যাপী চলমান উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে আলোচনার সময় নেতারা জানান, চেয়ারম্যান পদে পছন্দের প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি নিজেদের লোকজনকে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। এমনকি প্রত্যক্ষ মদদ দিয়ে নেতাকর্মীদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দিতেও বাধ্য করেছেন অনেকে। জেলা পর্যায়ের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ রয়েছে। তাদের কারণে নৌকার প্রার্থীর ভরাডুবি ঘটেছে। দলীয় স্বার্থবিরোধী এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত এসব মন্ত্রী-এমপির কারণে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ লঙ্ঘিত হচ্ছে বলেও অভিযাগ করেন নেতারা।
সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির নামও বৈঠকে আলোচিত হয়েছে। নেতাদের আলোচনা শুনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, যারা বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে তারা শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরে বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে যেসব মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় নেতা দল মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন না তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর প্রতিবেদন তৈরি ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাংগঠনিক নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বৈঠকে আগামী অক্টোবরে দলের জাতীয় সম্মেলনের আগেই দলের যেসব জেলা, উপজেলা, পৌর, থানা ও ইউনিয়ন কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব সম্মেলন আয়োজনে আটজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত আটটি টিম তৃণমূল পর্যায়ের এসব সম্মেলন ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে তদারকি করবেন। এসব টিমে দলের উপদেষ্টা পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারাও অন্তর্ভুক্ত হবেন। গতকালের বৈঠকে আটটি খসড়া কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ৫ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এসব কমিটি চূড়ান্ত হবে।
এই আট টিমের সদস্যরা যথাযথ মর্যাদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কার্যক্রমও তদারক করবেন। গতকালের বৈঠকে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী সারাদেশে দলীয়ভাবে উদযাপনে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে সারাদেশে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরে সাংগঠনিকভাবে বছরব্যাপী উপযোগী কর্মসূচি পালন ও গ্রন্থ প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।