বরিশালের ৭ উপজেলায় আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী
আগামী ২৪ মার্চ তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বরিশালের ১০টি উপজেলার মধ্যে ৯টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী রয়েছেন। বাকিগুলোতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী নেই বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট কিংবা বামদলগুলোর।
মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থদের নিয়ে বরিশালে রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভীড় করেন প্রার্থীরা। সাত উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে স্বতন্ত্রের ব্যানারে বিদ্রোহী প্রার্থীরাও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আগৈলঝাড়ায় আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত ও গৌরনদীতে বিদায়ী চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন্নাহার মেরী একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। যাচাই-বাছাইয়ে টিকে গেলে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।
সদর উপজেলা পরিষদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বিদায়ী চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুবুর রহমান মধু এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রেহানা বেগম। সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আনোয়ার হোসাইন।
বানারীপাড়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিদায়ী উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক ও উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান চোকদার। মুলাদীতে বিদায়ী চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান মিঠু খানের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ইউসুফ আলী, বাকেরগঞ্জে বিদায়ী উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম চুন্নুর সঙ্গে আওয়ামী লীগ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন একেএম তিতুমীর হাওলাদার, হিজলায় বিদায়ী চেয়ারম্যান সুলতান মাহামুদ টিপুর সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বেলায়েত হোসেন ঢালী, উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা কাজী জাকির হোসেন ও কেন্দ্রীয় প্রজন্ম লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। বাবুগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলালের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ রিপন ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের এনামুল হক রাজু। উজিরপুরে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দলের মনোনিত প্রার্থী আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় জাসদ নেতা আবুল কালাম আজাদ।
মঙ্গলবার শেষ দিন বাবুগঞ্জে ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী ফিরোজ আলমকে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ হট্টগোল হয়। ওয়ার্কার্স পার্টির স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কমী-সমর্থকরা উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে ভিন্নমতের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধার সৃষ্টি করে। ক্ষমতাসীনরা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউএনও’র কার্যালয়েও তালা ঝুলিয়ে দেয়। এর প্রতিবাদে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভের মুখে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ক্ষমতাসীনদের সরিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের এক সদস্যকে লাঞ্ছিত করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। যদিও স্থানীয় আওয়ামী লীগ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হট্টগোলের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিত হাওলাদার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে তার কার্যালয়ে গিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ফিরোজ আলমের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন। এ সময় জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক সাবেক এমপি টিপু সুলতানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি আইনজীবী তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘আমরা আশা করছি বিদ্রোহীরা দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা রেখে সরে দাঁড়াবেন। এ জন্য প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করবো। এরপরও কেউ সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনি মাঠে থাকলে তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বরিশাল জেলার ৫টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইকবাল আখতার জানান, ‘গতকাল মঙ্গলবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার শেষ দিন। এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে। আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত প্রার্থীরা তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারবেন। আগামী ২৪ মার্চ তৃতীয় ধাপে বরিশালের ৯ উপজেলায় অনুষ্ঠিত হবে ভোট গ্রহণ। (সুত্রঃ বাংলাট্রিবিউন.কম)